‘পাবলিক সার্ভিস দিবস’ ভাবনা
আবু আফজাল সালেহ
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আজ ২৩ জুলাই ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে প্রবেশকালে কর্মকর্তাদের ধারণা দেওয়া হয়-সিভিল সার্ভিসের জন্য জনগণ নয়, বরং জনগণের জন্যই সিভিল সার্ভিস। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, জননিরাপত্তা বিধান, পাবলিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, জনস্বাস্থ্য রক্ষা, ভূমি প্রশাসন, কৃষি উন্নয়ন, প্রকল্প বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, জনসংযোগ, পরিবেশ সংরক্ষণ, রাজস্ব আদায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন, ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি জনপ্রশাসনের মূল কর্মকাণ্ড। এসব দায়িত্ব পালনের পেছনে সততা, মেধা ও দক্ষতাই সিভিল সার্ভিস সদস্যদের শক্তি ও প্রেরণার উৎস। প্রশাসন মানে শুধু কর্তৃত্ব আরোপ বা নিয়ন্ত্রণ নয়, এর সমান্তরালে ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও অপরিহার্য। প্রশাসন-সুবিধাভোগীরা সমান্তরালে চলবেন। ২৩ জুন ‘আন্তর্জাতিক জনসেবা দিবস’। বিশ্বব্যাপী সিভিল সার্ভিস সদস্যদের জন্যই এ দিবস। সিভিল সার্ভিস হোক সেবামুখী ও জনমুখী-এ প্রত্যাশায় জাতিসংঘের উদ্যোগে সারা বিশ্বে দিবসটি উদযাপিত হয়ে থাকে। এ দিবস থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই বাংলাদেশে জাতীয় পাবলিক সার্ভিস ডে পালন করা হচ্ছে।
বর্তমান সরকার সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আন্তরিক হয়েছে। অনেকে লক্ষ করে থাকবেন, আগে যারা সার্ভিস গ্রহণ করতেন, তারা সরকারি দপ্তরসমূহে ছুটে যেতেন। আর এখন সরকারি কর্মচারীরা সার্ভিস গ্রহণকারীদের খুঁজে বের করেন এবং সার্ভিস দিয়ে নিজেদের ধন্য মনে করেন। সরকার কঠোরভাবে সরকারি কর্মচারীদের ওপর ‘ওয়াচ-ডগে’র ভূমিকা পালন করছে। উন্নয়ন মেলা বা পাবলিক সার্ভিস ডে বা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের বিশেষ দিনগুলোতে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে এটুআই সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে। একটি চমৎকার বিষয় হলো, প্রতিটি অফিস কমপক্ষে একটি করে আইডিয়া (যাকে ইনোভেশন বলা হচ্ছে) বাস্তবায়ন করবে, যেখানে সেবাগ্রহণকারীর সময়, অর্থ, ভিজিট কম হবে। দেখা যায়, মোবাইলের মাধ্যমেই এখন অনেকে সেবা পাচ্ছেন। সরকারি পদস্থ কর্মচারী এবং তৃণমূল সেবাগ্রহণকারীদের সঙ্গে প্রায়ই সরাসরি অথবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে। সরকারও কঠোরভাবে মনিটরিং করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও প্রায়ই চর-বনাঞ্চল-পাহাড়-হাওড় এলাকায় তৃণমূলের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সেখানকার কোনো সমস্যার কথা উপস্থিত সরকারের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা শুনছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুক্ত হয়ে সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন বা সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করছেন। জরুরি সেবা নম্বর বা অ্যাপস চালু করা হয়েছে। বিনাখরচে দ্রুত সমাধান পাচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। এসব বিষয় জনপ্রিয় করতে প্রচার-প্রচারণা দরকার।
একই ভবনের মধ্যে সব সরকারি বিভাগ কার্যক্রম পরিচালনা করবে-সরকারের এ ধারণা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে গেছে। অচিরেই ছড়ানো-ছিটানো অফিসগুলো একই ছাদের নিচে আসবে। এতে সরকারি সেবা জনগণ দ্রুত ও সহজে পাবে। প্রতি অফিসেই একজন করে তথ্য-প্রদানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অতএব তথ্য পেতে সমস্যা হয় না বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সংশ্লিষ্ট সার্ভিস প্রদানকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যায়। এখন সার্ভিস প্রদানকারীদের জন্য যেমন তিরস্কার/শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে, তেমনি দক্ষ সরকারি কর্মচারীদের পুরস্কার প্রদান করে থাকে সরকার। এটি সব ক্ষেত্রের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
মূলত এসব বিষয়ই পাবলিক সার্ভিস ডে-তে তুলে ধরা হয়। প্রতিবছর নতুন নতুন সেবাক্ষেত্র বাড়ছে, ডিজিটাল-আওতা বাড়ছে। আগের চেয়ে অনেক সহজে জনগণ বা সেবাগ্রহীতারা খুশিমুখে বরণ করছে সরকারের সেবাগুলো।
আবু আফজাল সালেহ : প্রাবন্ধিক
