অগ্রগতির অন্তরায় দুর্নীতি
মীর আব্দুল আলীম
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এক পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ঘুসের পরিমাণ অনেক বেড়েছে, যা বছরে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ঘুস-দুর্নীতি সংখ্যায় কিছুটা কমেছে, টাকার পরিমাণে বেড়েছে অনেক। কাজ উদ্ধার করতে রাষ্ট্রের ছোট মাপের নানা কর্তাকে যখন ঘুস দিতে হয়, তখন মনে হয় দুর্নীতি আরও বেড়ে গেছে। কিন্তু বড় কর্তাবাবুদের দফতরে বন্ধ দরজার পেছনে যেসব রফা হয়, সেখানে বহু কোটি টাকার অনিয়ম কেউ টেরও পায় না। আমাদের দেশে লোকে ঘুষ দেয় যাতে সুবিধামতো আইন ভাঙতে পারে। সহজে মানুষ ঘুষ দিতে পারে, তাই দেশে আইনও ভঙ্গ হয় বেশি। আবার ন্যায্য সেবা পেতে জনগণকে ঘুস দিতে হয়। জনগণকে যদি রাষ্ট্রের সেবা পেতে হয় ঘুসের বিনিময়ে, এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে? সরকারি ও বেসরকারি খাতে যেভাবে দুর্নীতির প্রসার ঘটছে, তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। ঘুস, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, লুটপাট, জালিয়াতি বেড়েই চলছে। প্রতিদিন নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রচুর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
জনগণের সেবা খাতকে নির্ঝঞ্ঝাট ও দুর্নীতিমুক্ত রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি যে বাড়ছে, সাদা চোখেই তা দৃশ্যমান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি কমিয়ে আনার প্রয়াস থেকেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রায় দ্বিগুণ করেছেন। সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। এটা নিঃস্বন্দেহে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা। দুর্নীতি কমাতে সচিবদের বারবার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, পে-স্কেলে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন যে হারে বেড়েছে, তা বিশ্বে বিরল। তাই জনগণ যেন সেবা পায়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
কিন্তু তারপরও দুর্নীতি কমেনি। ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন, ঘুস ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। দুর্নীতির এ চিত্র যে কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তার উদাহরণ উঠে এসেছে টিআইবির চলতি প্রতিবেদনে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সেবা খাতে দুর্নীতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘুস ছাড়া সেবাপ্রাপ্তি এখন প্রায় দুরূহ।
পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি দুর্নীতি আছে। এ কথাটির আপেক্ষিক সত্যতা মেনে নিয়েও বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় দুর্নীতির ব্যাপকতাকে অস্বীকার করার কোনো অজুহাত নেই। দুর্নীতি জনগণের মনে ব্যাপক হতাশার জন্ম দিয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, দেশের রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যকর ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারছে না। অথচ একটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন সমাজব্যবস্থার প্রধান ভিত্তি হওয়ার কথা এসব প্রতিষ্ঠানের। দেশে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ প্রতিটি সেক্টরই যেন ছেয়ে গেছে দুর্নীতিতে। ঘুস ছাড়া কোনো কিছুই মেলে না। যারা দুর্নীতি করে, বেশির ভাগ সময়েই তারা পার পেয়ে যায়। দুর্নীতির অভিযোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমলে নেওয়া হয় না, দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শাস্তি পায় না। ফলে দুর্নীতি রোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতি রোধে আইনের কঠোরতা বাড়াতে হবে। সর্বোপরি এ ধরনের অপরাধে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভাগীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
মীর আব্দুল আলীম : সাংবাদিক ও সমাজ গবেষক
newsstoremir@gmail.com
