চুয়াল্লিশে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইসমাইল হোসেন রাহাত
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইসলামি শিক্ষার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে ২২ নভেম্বর খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলায় ১৭৫ একর জমির ওপর ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) স্থাপিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে আটটি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার।
পটভূমি : মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৪ সালে টাঙ্গাইলের সন্তোষে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেসরকারিভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পরবর্তীকালে সরকার ১৯৭৬ সালে ১ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ১৯৭৭ সালে ২৭ জানুয়ারি এমএ বারীকে সভাপতি করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৭৭ সালের ২০ অক্টোবর এই কমিটি একটি রূপরেখা তৈরি করে সংসদে উপস্থাপন করে। ১৯৭৭ সালে মক্কায় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে মুসলিম দেশগুলোয় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় করার সুপারিশ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ১৭৫ একর জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরের বছর জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়। ১৯৮১ সালে এএনএম মোমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে উপাচার্য করে দুটি অনুষদের অধীনে চারটি বিভাগে ৩০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে।
আজ ২২ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ৪৪ বছরে পদার্পণ করল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এই সুদীর্ঘ পথচলায় যেমন রয়েছে প্রাপ্তি, তেমনই রয়ে গেছে অনেক প্রত্যাশাও। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা অবদান রেখে চলেছেন। শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, শিক্ষা, খেলাধুলা ও গবেষণায় দেশ ও দেশের বাইরে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে অবদান রেখে চলছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে সব ধর্মের মানুষের কাছে এ বিশ্ববিদ্যালয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি মডেল হিসাবে পরিচিত। পিছিয়ে পড়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদ কাজ করে যাচ্ছে।
এ যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট চারবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হযেছে। যাত্রালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ১২ জন উপাচার্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। বর্তমানে ১৩তম উপাচার্যের দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম।
বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ‘আবাসিক’ উল্লেখ থাকলেও দীর্ঘ ৪৩ বছরেও তা পূর্ণতা পায়নি। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আটটি হল, যেখানে মাত্র চার হাজার শিক্ষার্থী থাকতে পারে। পরিবহণ পুলে ৪৫টি পরিবহণ রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাহিদার তুলনায় এই আবাসন ও পরিবহণ সুবিধা অপ্রতুল। যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন বিভাগ খোলা হলেও শ্রেণিকক্ষের বন্দোবস্ত হয়নি পূর্ণরূপে। শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব ও সেমিনার লাইব্রেরির সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে নতুন বিভাগগুলো। আমাদের প্রত্যাশা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে।
ইসমাইল হোসেন রাহাত : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
mdrahatbd56@gmail.com
