|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রতিবছর শীত মৌসুমে ওরা ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে আসে। আবার শীত চলে যাওয়ার পর স্বদেশে ফিরে যায়। ওরা আসে সুদূর উত্তর গোলার্ধ থেকে। ওদের কেউ বলে পরিযায়ী, কেউ বলে যাযাবর, কেউবা বলে অতিথি পাখি। আমাদের দেশে অতিথি পাখি আসে প্রধানত সাইবেরিয়া, উত্তর ইউরোপ, হিমালয় পর্বত ও তিব্বত অঞ্চল থেকে। শীতকালে যেসব পাখি আসে সেগুলো হচ্ছে-বুনোহাঁস, খঞ্জনা, ওয়ার্বলার, হাড়গিলা, স্নাইপ বা কাদাখোঁচা, বক, সারস প্রভৃতি। এসব অতিথি পাখি দেশের ঝোপ-জঙ্গল, মাঠঘাট ও জলাশয়ে বিচরণ করে। কিছু পাখি এসে আশ্রয় নেয় দ্বীপ, সমুদ্র উপকূল, নদীর চর, ছোট বা বড় জলাশয় এবং সুন্দরবন অঞ্চলে।
এসব পাখি নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো বিভিন্ন দেশে অবস্থান বা বিচরণ করে। উড়ে চলার সময় বিভিন্ন ভূমিচিহ্ন যেমন : নদীনালা, পাহাড়, জঙ্গল প্রভৃতি মনে রেখে এরা চলাফেরা করে। পাখিবিদদের মতে, দেহের ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে এসব পাখি সহজেই বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়ার তারতম্য অনুভব করতে পারে এবং সে অনুযায়ী সেখানে অবস্থান করে।
প্রশ্ন জাগতে পারে, অতিথি পাখি কোন কৌশলে কোনোরকম অসুবিধা ছাড়াই এতটা পথ অতিক্রম করতে পারে? পেশির কাজের জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। এটি রক্তের লোহিতকণিকার মাধ্যমে বাহিত হয়। দেহের সেল বা কোষে অক্সিজেন থেকে শক্তি সৃষ্টি হয়। গবেষকরা মনে করেন, এ অতিথি পাখিগুলোর পেশিতে বহু রক্ত-ধমনি থাকায় ভালোভাবে রক্ত সরবরাহ হয়। তাছাড়া এদের রক্তের লোহিতকণিকা কিছুটা ভিন্ন ধরনের। এটা অক্সিজেন শক্ত করে ধরে রাখতে পারে। এ কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পেশিতে আসতে পারে। আরেকটি কৌশল হলো, এসব পাখির মাইটোকন্ড্রিয়া রক্তের ধমনির পাশাপাশি থাকে। তাই এরা দ্রুত অক্সিজেন গ্রহণ করে শক্তি হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। এভাবে শারীরিক গঠনের দিক দিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে বলেই এরা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে উঁচু পথ অতিক্রম করতে পারে।
শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়সহ অনেক এলাকা অতিথি পাখিতে ভরে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে অতিথি পাখিদের জন্য ভয়ংকর বিপদ ওত পেতে থাকে। শ্রান্ত ও ক্লান্ত হয়ে এদেশে নামার সঙ্গে সঙ্গে অনেক পাখি শিকারীর ফাঁদে আটকা পড়ে। একশ্রেণির মানুষ অসহায় এ পাখিগুলোকে হত্যা করে এদের মাংস খেয়ে রসনা তৃপ্ত করে। অতিথি পাখি মারা বা ধরা নিষিদ্ধ হলেও সহজ আইনকে অবহেলা করে অনেকেই তা প্রকাশ্যে বিক্রি করে থাকে। অতিথি পাখি ফসলি জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। ওদের স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে দেওয়া উচিত।
প্রদীপ সাহা : প্রাবন্ধিক
pradipsaha509@gmail.com
