পারকিনসন রোগ ও মানসিক স্বাস্থ্য
ডা. সাইফুন নাহার
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
১১ এপ্রিল ছিল বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস। পারকিনসন ডিজিজ (PD) হলো মস্তিষ্কের একটি ক্ষয়জনিত অবস্থা, যা কিছু মটর লক্ষণ (ধীরগতি, কাঁপুনি, অনমনীয়তা) এবং বিভিন্ন ধরনের অমটর জটিলতার (পরিজ্ঞানীয় দুর্বলতা, মানসিক রোগ, ঘুমের সমস্যা, ব্যথা ইত্যাদি) সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষণায় দেখা গেছে, এ রোগের কোনো না কোনো ধাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ বিষণ্নতায় ভোগেন এবং ৪০ শতাংশ উদ্বেগজনিত ব্যাধি অনুভব করেন, যা তাদের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, জীবনের মান হ্রাস করে। এর কারণগুলো হলো :
১. জৈবিক : পারকিনসন রোগ এবং বিষণ্নতা, চিন্তাভাবনা ও আবেগের সঙ্গে জড়িত মস্তিষ্কের একই অংশকে প্রভাবিত করে। উভয় অবস্থাই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার/মস্তিষ্কের রাসায়নিকের (ডোপামিন, সেরোটোনিন ও নরএপিনেফ্রিন) ভারসাম্যহীনতা থাকে, যা মেজাজ ও চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
২. মনস্তাত্ত্বিক : নেতিবাচক চিন্তা একটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, যা মানুষের মাঝে দুঃখ, অসহায়ত্ব ও হতাশার অনুভূতি তৈরি পারে। এটি একজন ব্যক্তিকে বিষণ্নতার জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। সীমাবদ্ধ জীবনধারার ফলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা সহায়ক সামাজিক যোগাযোগের অভাব, দ্রুত অবসরগ্রহণ বা পরনির্ভরশীলতা-এগুলো বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৩. পরিবেশগত : গুরুতর মানসিক চাপ, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণে জীবনযাপনে কষ্ট কিছু লোকের জন্য বিষণ্নতা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া : এ রোগের চিকিৎসায় প্রেসক্রিপশনের ওষুধগুলো বিষণ্নতার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।
পারকিনসন রোগে বিষণ্নতা নির্ণয়ের চ্যালেঞ্জ : ক. কিছু বিষণ্নতার লক্ষণ PD-এর সঙ্গে একত্রে প্রকাশ পায়। উদাহরণস্বরূপ, ঘুমের সমস্যা এবং ধীর অনুভূতি উভয় অবস্থাতেই এটি ঘটে। তাই পারকিনসনে বিষণ্নতা শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। খ. পারকিনসনের বিষণ্নতা নির্ণয়কে জটিল করে তুলতে পারে এমন অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রযেছে : মুখের মাস্কিং ইফেক্ট, মুখের পেশিতে পারকিনসনের একটি উপসর্গ, যা পারকিনসন আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে দৃশ্যমানভাবে আবেগ প্রকাশ করা কঠিন করে তুলতে পারে। পারকিনসন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই বুঝতে পারেন না যে তাদের মেজাজের সমস্যা রয়েছে বা লক্ষণগুলো ব্যাখ্যা করতে অক্ষম। তাই তারা চিকিৎসা চান না।
এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে, বিষণ্নতা চলাচল ও পারকিনসনের উপসর্গ উভয়ই তীব্র করতে পারে। চিকিৎসা যেমন কম্পন এবং পারকিনসনের অন্যান্য লক্ষণ কমাতে পারে, তেমনি বিষণ্নতাও উপশম করতে পারে। বিষণ্নতা যদিও এ রোগের সাধারণ লক্ষণ, কিন্তু এটিকে প্রায়ই উপেক্ষা করা হয় এবং চিকিৎসা করা হয় না। অক্ষমতা হ্রাস এবং জীবনের মান উন্নত করার জন্য এর চিকিৎসা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং, বিশেষত জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি (CBT), বিষণ্নতা ও উদ্বেগ কমাতে চিন্তাভাবনা ও আচরণের ধরন চিনতে এবং পরিবর্তন করতে সহায়তা করে। রুটিনমাফিক ব্যায়াম-হাঁটা, যোগব্যায়াম, বাগান করা বা অন্য কোনো কার্যকলাপ, যা রোগী উপভোগ করেন, তা হতাশার লক্ষণগুলো কমিয়ে দিতে পারে।
ডা. সাইফুন নাহার : সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্ট; সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
