|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পরিবেশই প্রাণের ধারক, জীবনীশক্তির বাহক। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার ওপরই প্রাণীর অস্তিত্ব নির্ভর করে। পরিবেশ প্রতিকূল হলে জীবের ধ্বংস ও বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। পরিবেশের ওপর নির্ভর করে মানুষ, উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীর বিকাশ ঘটে। বর্তমানে নানা কারণে পরিবেশদূষণ সমস্যা প্রকট হওয়ায় মানবসভ্যতা হুমকির সম্মুখীন। এ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে চলছে নানান গবেষণা। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণ নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ ৫ জুনকে ঘোষণা করেছে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’।
মানুষ একদিন প্রকৃতিকে জয় করার নেশায় মত্ত হয়েছিল। প্রকৃতিকে জয় করেও মানুষের সেই নেশার অবসান হয়নি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ জলে-স্থলে-মহাশূন্যে আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। কিন্তু মানুষের এই বিজয় মানুষকে একধরনের পরাজয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আজ আমরা এক ভয়ংকর সংকটের মুখোমুখি। এ সংকট বিশেষ কোনো দেশের নয়, বিশেষ কোনো জাতিরও নয়। এ সংকট আজ বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের পরিবেশ আজ নানাভাবে দূষিত। এই দূষণ আজ ভয়ংকর এক ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের। আজ জলে বিষ, বাতাসে আতঙ্ক, মাটিতে মহাত্রাস। বিগত ৬০ বছরে ৮০টির বেশি প্রজাতির প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কয়েকশ প্রজাতির গাছপালা বিলুপ্ত হয়েছে।
আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে; কিন্তু এর পরিণামে বাতাসে প্রতিবছর ২২ কোটি টন কার্বন মনোক্সাইড সঞ্চিত হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসের আনুপাতিক হার ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে বৃষ্টির পানিতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি হচ্ছে। এই অ্যাসিড বর্ষণ অরণ্যে মহামারি সৃষ্টি করছে, যা খাদ্যশস্যকে করছে বিষাক্ত। দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সবুজ অরণ্য। প্রতিবছর ৭৫ লাখ হেক্টর জমি মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। প্রতি মিনিটে ৫০ হেক্টর উর্বর জমি বালুকাকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর বাতাসে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন কমছে। বিজ্ঞানের অপব্যবহারে ভূ-প্রকৃতির ওপর অত্যাচার বাড়ছেই। শস্য রক্ষার জন্য নানা ধরনের কীটনাশক তৈরি ও প্রয়োগ হচ্ছে। এসব বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্যের অনুপ্রবেশ ঘটছে মানুষের শরীরে। ফলে নানা জটিল ও কঠিন রোগ দানা বাঁধছে আমাদের শরীরে। পরিবেশ দূষণের কারণে পৃথিবীতে ৮০ শতাংশ নিত্যনতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে পানিতে পরিণত হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের আয়তন সংকুচিত হচ্ছে। দূষণের কারণে উদ্ভিদ ও জীবজগৎ আজ বিপন্ন। সমুদ্র-নদী-জলাশয়ে মাছের সংখ্যা দিনদিন কমছে। মাছের শরীরেও দেখা দিচ্ছে নানা রোগ।
পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হলো বায়ুদূষণ। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান লরেন্স বের্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি বলছে, রাসায়নিক মিশ্রণ আছে-এমন দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকলে তা চোখ, নাক বা গলায় সংক্রমণ অথবা ক্ষতির কারণ হতে পারে, সেই সঙ্গে ফুসফুসের নানা জটিলতা যেমন: ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমা এবং নানাবিধ অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বায়ুদূষণের সঙ্গে ডায়াবেটিসেরও সম্পর্ক পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
পরিবেশই আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন। পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকলে আমরা মুক্ত থাকব বিভিন্ন জটিল-কঠিন রোগ, দুর্যোগ ও মহামারি থেকে। পরিবেশ সুরক্ষিত থাকলে আমরা থাকব সুরক্ষিত। আসুন পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হই, অন্যকেও সচেতন করে তুলি। পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে তুলি, ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করি।
ইমরান ইমন : প্রাবন্ধিক
emoncolumnist@gmail.com
