Logo
Logo
×

অল্পকথা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আগামীর বিশ্ব

Icon

মৃদুল কান্তি ধর

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বর্তমান বিশ্বে আলোচিত একটি বিষয়। মানুষের সহজাত ক্ষমতা হচ্ছে তার বুদ্ধি বা চিন্তাশক্তির দ্বারা কোনো কিছু বিশ্লেষণ এবং সমস্যার সমাধান করা। মানুষের এই বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তিনির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একধরনের সিমুলেশন, যা একটি যন্ত্রকে মানুষের মতো করে কোনো কিছু চিন্তা, বিশ্লেষণ বা সমস্যার সমাধান করে থাকে। এটি একই সঙ্গে নতুন কিছু শিখতে পারে এবং ওই লব্ধ জ্ঞান ব্যবহার করে পরবর্তী সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করতে পারে। এ প্রযুক্তির নিজে নিজে নতুন কিছু শিখতে পারার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বার্ড-এর নিজে থেকে বাংলা শেখা। মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেন এআই-এর তৈরি চ্যাটজিপিটি ও গুগলের বার্ড চ্যাটবট ঘিরে মানুষের আগ্রহ ক্রমেই যেমন বাড়ছে, তেমনই একই সঙ্গে বাড়ছে উদ্বেগও। তা সত্ত্বেও বিষয়টি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতের পৃথিবী হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।

আগামী বিশ্ব অর্থনীতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রয়েছে অপার সম্ভাবনা। ২০১৮ সালে প্রকাশিত ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করতে পারে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পেছনে বিনিয়োগ করছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার এ খাতের গবেষণা ও উন্নয়নে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের একটি উদ্যোগ চালু করেছে।

আধুনিক স্বাস্থ্যসেবায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হচ্ছে নতুন ওষুধ ও চিকিৎসা, রোগ নির্ণয় এবং ব্যক্তিগত সেবা প্রদানের জন্য। উৎপাদনব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণ, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদনকে অপ্টিমাইজ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হচ্ছে জালিয়াতি শনাক্ত করতে, ঝুঁকি পরিচালনা এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরামর্শ দিতে। কেনাকাটার অভিজ্ঞতা, পণ্যের সুপারিশ এবং ইনভেন্টরি অপ্টিমাইজ করতেও ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ অব্যাহত থাকায় এটি আগামীর বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। খ্যাতনামা ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যমান চাকরির এক-তৃতীয়াংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর নতুন দুনিয়ার অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে অনেকভাবেই। আগামী বিশ্বে টিকে থাকতে হলে মানুষকে এ বিবর্তন মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে নজর দিতে হবে আজ থেকেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত মেশিনগুলো আরও উন্নত হয়ে উঠলে তাদের প্রোগ্রাম ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য মানুষের প্রয়োজন হবে। এছাড়াও এআই ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং এবং রোবোটিক্সের মতো ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি হবে। সতর্ক পরিকল্পনা এবং দূরদর্শিতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সবার জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে।

মৃদুল কান্তি ধর : সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম