Logo
Logo
×

অল্পকথা

পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা

Icon

রাশিদুল হাসান

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের জীবন ধারণের জন্য খাদ্য যেমন অপরিহার্য, তেমনি মানবজীবনের প্রতিটি মুহূর্তে অক্সিজেনের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বৃক্ষের গুরুত্বও তাই অপরিসীম। কারণ বৃক্ষ আমাদের প্রশ্বাসের সঙ্গে নির্গত কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে মানুষসহ সব প্রাণীর বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন নির্গমন করে। অতিরিক্ত শব্দদূষণ ও তাপমাত্রা শোষণ করে পরিবেশকে শুদ্ধ ও নির্মল রাখে। বৃক্ষ ছাড়া কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব অকল্পনীয়। বৃক্ষ মাতৃস্নেহে আমাদের ফুল, ফল ও ছায়া দেয় এবং পশু-পাখি ও কীটপতঙ্গের আশ্রয়স্থল হিসাবে গুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ বনাঞ্চল সংকুচিত হয়ে যাওয়া। কিছু প্রভাবশালী নির্বোধ, অর্বাচীন ও অর্থলিপ্সু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নির্বিচারে সুন্দরবন, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, মধুপুরের বন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল উজার করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য শহরের ফার্নিচারের দোকানগুলোতে কাঠ সরবরাহ করে। এছাড়া হাজার হাজার ইটভাটায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয় কাঠ।

ঢাকা মহানগরীর সড়ক উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির অজুহাতে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থা প্রায়ই বৃক্ষনিধন করে থাকে। এর ফলে বায়ুদূষণ ও দাবদাহ বৃদ্ধি পায়। ঢাকা নগরীর প্রায় সব মাঠ ও পার্ক সিটি করপোরেশনের আওতাধীন। তারা পার্ক ও মাঠগুলোয় পরিকল্পিতভাবে লাখ লাখ বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করে শহরের সবুজায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা যদি প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় ও ছাদে বৃক্ষরোপণ এবং নিয়মিত তা পরিচর্যা করি, তাহলে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি ভয়াবহ বায়ুদূষণ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে পারে।

বৃক্ষরোপণকে উৎসাহিত করতে আমরা বিভিন্ন দেশের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি। যেমন, ২০১৯ সালের ১৫ মে ফিলিপাইনে ‘গ্র্যাজুয়েশন লিগ্যাসি ফর দ্য এনভায়রনমেন্ট অ্যাক্ট’ প্রণীত হয়। এ আইনে কোনো শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতে হলে কমপক্ষে ১০টি গাছ লাগাতে হবে। তবে এ গাছ লাগাতে হবে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে। বাংলাদেশেও অনুরূপ আইন প্রণয়ন করা উচিত বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা। দেশে বৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদানের জন্য ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার’র পরিধি ও সম্মানির পরিমাণ আর্কষণীয় হওয়া উচিত।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কোনো নগরীর অন্তত ২৫ শতাংশ এলাকা বৃক্ষ ও তরুলতা আচ্ছাদিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ২০১৯ সালে স্যাটেলাইট জরিপ অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীর মাত্র ৮ শতাংশ এলাকাকে গ্রিন জোন এরিয়া হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কাজেই রাজধানীতে ব্যাপকভাবে গাছ লাগাতে হবে। বস্তুত সারা দেশেই বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচিকে জোরালো করতে হবে। উন্নয়নের নামে কথায় কথায় বৃক্ষ নিধন করা চলবে না। আমরা বৃক্ষরোপণ তথা সবুজায়নের সামাজিক আন্দোলনকে গতিশীল ও বেগবান করার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে পারব একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী।

রাশিদুল হাসান : সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয় চার নেতা পরিষদ

rhassan022@gmail.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম