Logo
Logo
×

অল্পকথা

বর্ষার মনোমুগ্ধকর রূপ

Icon

লিটন দাশ গুপ্ত

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ঋতুচক্রের আবর্তে প্রতি দুই মাস পরপর এদেশে একেকটি ঋতুর আগমন ঘটে। ছয়টি ঋতুর কারণে আমাদের দেশে অতুলনীয় প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের সমারোহ ঘটে। বাংলার দিনপঞ্জিকায় আষাঢ় ও শ্রাবণ এ দুই মাস বর্ষাকাল। ঋতুর ক্রমানুযায়ী বর্ষাকাল অবস্থানগত হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তাই ঋতুচক্রের ধারাবাহিক আবর্তে প্রতিবছর গ্রীষ্মের পর আসে বর্ষাকাল। গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ আর মনপ্রাণ ওষ্ঠাগত, তখন মানুষের পরম কাঙ্ক্ষিত বা প্রার্থনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বর্ষা। এই প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে প্রকৃতিকে সুশীতল, শ্যামল, স্নিগ্ধ ও কোমল করতে সগৌরবে আসে বর্ষা ঋতু। এ সময় কদম, কেয়া, কামিনী, বেলী ফুলের সৌরভে মুখরিত হয় বাংলার প্রান্তর। মৃত নদী ও খাল প্রাণ ফিরে পায়। কলকল ছলছল চলনে চপল হয়ে ওঠে রূপালী নদীগুলো। পূর্ণতা পায় নদীমাতৃক বাংলাদেশ।

বর্ষা এলেই শৈশব স্মৃতিতে আচ্ছন্ন হই। বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দটা ছিল অন্যরকম। মায়ের অবাধ্য হয়ে বড়দের সঙ্গে জাল নিয়ে মাছ ধরতে ছুটে যেতাম বাড়ির আশপাশে পুকুর, ডোবায় কিংবা খালের কিনারায়। এখনো মনে পড়ে গ্রামের বাড়ির মাটির দোতলা ঘরে জানালার পাশে বসে বর্ষার অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করার স্মৃতি। ফোঁটা ফোঁটা বারিধারায় ছোট বড় বৃক্ষের নুয়ে পড়া ডালপালা-পাতা দেখে ছোট মনে ছিল তখন কতই না প্রশ্ন, কত কী ভাবনা! টিনের ছাদের নিচে বন্ধুদের সঙ্গে বসে দুই হাতে একবার কান চেপে রেখে আর একবার ছেড়ে বারবার বৃষ্টির শব্দকে বিভিন্ন স্বর ও সুরের রূপ দিয়ে উপভোগ করতাম। মনোমুগ্ধকর নানা ছন্দে চলে যেতাম হাসি-খুশি-আনন্দ-স্বপ্নের এক সুদূরের অজানা দেশে! আকাশে দেখা সজল কাজল মেঘের ঘনঘটার মধ্যে বিভিন্ন প্রাণীর বিচিত্র রূপ কল্পনা করে নিতাম। কানায় কানায় ভরে উঠত খাল-বিল-পুকুর-ঘাট তথা পল্লী প্রকৃতির প্রান্তর। কলাগাছের ভেলায় ঘুরে বেড়াতাম ডুবন্ত পথঘাট-মাঠে। প্রকৃতির সবকিছু এক অসাধারণ অপরূপ সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হতো ছেলেবেলার সেই বর্ষাকাল।

বর্ষাকাল কেবল শৈশবে ছিল তা নয়। বর্ষাকাল তখনো ছিল, এখনো আছে, প্রতিবছর বর্ষা আসে। তবে এখন প্রতিবছর বর্ষা আসে, কিন্তু শৈশব আসে না।

সত্যিই বর্ষা ঋতু আমাদের মনের কথা বোঝে, আমাদের চাওয়া-পাওয়া, অভাব-অভিযোগ অনুধাবন করতে পারে। তাই গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে সবার প্রার্থনায় রিমঝিম বৃষ্টি নেমে আসে। এ যেন ঝুমুর তালে নূপুর পায়ে অহর্নিশ ঝরে পড়া। বাংলার উর্বর ভূমি আরও উর্বর করতে আসে বর্ষা। তাই তো বর্ষা আমাদের এত প্রিয়, এত কাঙ্ক্ষিত।

লিটন দাশ গুপ্ত : শিক্ষক ও আইনজীবী

liton_dg@yahoo.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম