Logo
Logo
×

অল্পকথা

অনলাইন জুয়ার কালো থাবা

Icon

আলী ওসমান শেফায়েত

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কৌতূহল থেকে তরুণ প্রজন্ম আকৃষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে। পাঁচ-দশ হাজার টাকা বিনিয়োগ শুরু করে লোভে পড়ে একপর্যায়ে হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব সাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশের এজেন্টরা। জুয়ায় বিনিয়োগ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বিপদসংকেত।

জুয়ায় আর্থিক লেনদেনের সহজ মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)। এছাড়া রয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমেও পেমেন্ট করার সুযোগ। জুয়া খেলা বেশি করে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে বাংলায়। অনলাইন ক্যাসিনোর অ্যাপস ইনস্টলের জন্যও দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অফার। এমনকি বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেলিব্রিটির ছবিও দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এই অনলাইন ক্যাসিনো। তবে এসব ক্যাসিনোর মালিক কারা বা কোথা থেকে পরিচালিত হচ্ছে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো তথ্য নেই। এসব অ্যাপের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কারিগরি সক্ষমতার অভাব রয়েছে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের। তারা বলছে, বিদেশ থেকে অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালিত হওয়ায় এগুলো ঠেকানো সহজ নয়।

কয়েকটি ক্যাসিনোর ফেসবুক পেজে দেওয়া রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর। এগুলোতে যোগাযোগ করেও তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং টাকার বিনিময়ে গ্রুপের সদস্য হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে। চাওয়া হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, নাম, বয়স, জন্ম তারিখ ও মোবাইল নম্বর। এসব তথ্য দিলেই মেলে গ্রুপের সদস্য হওয়ার অনুমতি।

জুয়ার সাইট বন্ধ করেও মিলছে না সমাধান। ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে অনলাইনে জুয়া খেলার ১৭৬টি সাইট বন্ধ করার কথা বলা হয়। ২০২২ সালে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে দেশে অনলাইনে জুয়া খেলার প্রবণতা বাড়ছে জানিয়ে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর ৩৩১টি অনলাইন জুয়ার সাইট বন্ধ করে বিটিআরসির ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল’। এছাড়া আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সার্চ ইঞ্জিন ‘গুগল’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনলাইন জুয়া বা বাজি সংক্রান্ত ১৫০টি গুগল অ্যাপস বন্ধের জন্য রিপোর্ট করা হলে গুগল কর্তৃপক্ষ প্লে স্টোর থেকে ১৪টি অ্যাপস বন্ধ করে দেয়। অবশিষ্ট অ্যাপস বন্ধের জন্য যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়।

ডিজিটাল প্লাাটফর্ম একটি বিশাল জায়গা। যারা অবৈধ লেনদেনের ক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্লাটফর্ম ব্যবহারের চেষ্টা করেন, তাদের ধরার জন্য ২৪ ঘণ্টা একটা টিমকে কাজে লাগাতে হবে। জানা যায়, জুয়া খেলার সাইটগুলোতে ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের বদলে এজেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে।

দেশ থেকে অনলাইন জুয়ার কালো থাবা দূর করতে সামাজিকভাবে সবাইকে সংঘবদ্ধ হতে হবে। জুয়ার নেতিবাচকতা সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। কিভাবে স্মার্টফোন ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা যায় তা শিক্ষার্থীসহ সবাইকে বোঝাতে হবে। পরিবারে অভিভাবকদের নীতিগতভাবে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। অনলাইন জুয়ার নেতিবাচকতা সম্পর্কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেমিনারের আয়োজন করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোনে শিক্ষামূলক বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করা শেখানো এবং স্মার্টফোনকে একটি শিক্ষামূলক যন্ত্র ভাবতে শেখাতে হবে। সরকারিভাবে বিভিন্ন বিদেশি জুয়ার অ্যাপ্লিকেশন অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। অনলাইন জুয়ার বিষবৃক্ষকে অবিলম্বে সমূলে উৎপাটন করা না হলে শাখা-প্রশাখা গজিয়ে এটি স্থায়ী রূপলাভ করবে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

আলী ওসমান শেফায়েত : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

aliosmansefaet@gmail.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম