|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রায় মহামারি আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। রাজধানী ঢাকায় সংক্রমণ হার সবচেয়ে বেশি। এর কারণ হিসাবে অধিক মানুষের চাপ, বসবাসের অনুপযুক্ত পরিবেশ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদাসীনতাকে দায়ী করা যায়। ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে মশার প্রজননক্ষেত্র, অন্যদিকে রোগের আকস্মিক প্রাদুর্ভাব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো হলো-টাইপ-১, টাইপ-২, টাইপ-৩ ও টাইপ-৪। ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন ব্যক্তি এর যে কোনোটি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। একেক ক্ষেত্রে একেক রকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ভিন্নতার কারণে এর চিকিৎসা পদ্ধতিতেও ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। তবে বর্তমান সময়ে টাইপ-৩ ভাইরাসের সংক্রমণের হার বেশি বলে গবেষণায় জানা গেছে। কোনো ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে নতুন সিরোটাইপের সংক্রমণ ঘটলে তা দেহের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সাধারণত Aedes aegyptii মশা কামড়ানোর ৩-১৪ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু রোগের লক্ষ্মণ প্রকাশ পায়। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই সুপ্তিকালীন ব্যক্তির দেহে কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায় না। উল্লেখ্য, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত ২ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সুস্থ হতে শুরু করে। ডেঙ্গু রোগের প্রাথমিক ও সাধারণ একটি লক্ষণ হলো শরীরে তীব্র জ্বরের উপস্থিতি। ডেঙ্গু রোগীর সর্বোচ্চ ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর থাকতে পারে। এছাড়া ডেঙ্গু রোগে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ও সন্ধিস্থলে ব্যথা, বমিভাব, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে র্যাশ বা লালচে ফুসকুড়ি এবং রক্তজমাট অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তবে ডেঙ্গু সংক্রমণের কিছু ক্ষেত্রে র্যাশ নাও দেখা যেতে পারে। ডেঙ্গু রোগের অন্যতম জটিলতা হলো রক্তের অনুচক্রিকা বা প্লাটিলেট কমে যাওয়া। প্লাটিলেট কাউন্ট ছাড়া খালি চোখে তা বোঝা সম্ভব নয়। শারীরিকভাবে জ্বর, শরীর ব্যথার মতো সাধারণ লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। ডেঙ্গু প্রকোপকালীন মৌসুমে কোনো ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হলে অবশ্যই বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সাধারণ ও প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। তবে ডেঙ্গু রোগীকে অবশ্যই তরল খাবার, ডাবের পানি, ভাতের মাড়, বিভিন্ন ফলমূল অর্থাৎ সহজে হজম হয় এমন খাবার দিতে হবে। ডেঙ্গু রোগীর কক্ষে সার্বক্ষণিক মশারীর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে যেন রোগী মশা ও অন্যান্য ক্ষতিকর পরজীবীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে পারে। অধিক জ্বর হলে প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে। অন্য ওষুধের প্রয়োজন হলে তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে। বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগী নিজ বাসায় সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে রক্ত জমাট, মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া অথবা বেশ কিছুদিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত জ্বর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। প্লাটিলেট কাউন্ট ২০ হাজারের নিচে নেমে এলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি থাকে বলে ধরা হয়। তবে ৫০ হাজারের নিচে নেমে গেলেই হাসপাতালে নিয়ে রোগীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা উত্তম। আবার শারীরিক জটিলতা প্রকট আকার ধারণ করলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে রুটিন চেকআপের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এতে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার গতি বেগবান হবে।
মো. এমদাদুর রহমান উদয় : শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
