Logo
Logo
×

অল্পকথা

এল নিনোর প্রভাব?

Icon

সাধন সরকার

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। জলবায়ুবিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, পৃথিবীজুড়ে এল নিনোর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীব্যাপী যে সমস্যা বিরাজমান, এল নিনো সেসব সমস্যাকে আরও ত্বরান্বিত করে থাকে। এর সহজ অর্থ হলো, পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও বাড়বে। এল নিনো বলতে মূলত প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ স্রোতকে বোঝায়। প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্ব অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় তখন তাকে এল নিনো বলে। এর ফলে অতি বেশি উষ্ণতা উপকূলীয় এলাকার ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাভাবিক বায়ুপ্রবাহ হারিয়ে গিয়ে উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ চারদিকে বিরাজ করে। সাধারণত দুই থেকে সাত বছর পরপর এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা ১৮ মাসের বেশি সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। মূলত ইকুয়েডর, পেরু ও চিলির জেলেরা এই উষ্ণ স্রোতের সন্ধান পান।

মার্কিন বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, পৃথিবীতে এল নিনোর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফলে ২০২৪ সাল হতে পারে পৃথিবীর উষ্ণতম বছর। এতে ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা (তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখা) ছাড়িয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা ‘নোয়া’র (ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্টেশন) পূর্বাভাস অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়া-এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এবার তাপমাত্রা বেশি উষ্ণ থাকবে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাও একইরকম পূর্বাভাস দিয়েছে। লা নিনোর কারণে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বেশি হয়। কিন্তু এ অঞ্চলগুলোতে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গেছে। শুরু হয়েছে এল নিনোর প্রভাব। আবহাওয়ায় উষ্ণ স্রোতের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ার পাশাপাশি কমে যাচ্ছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। এল নিনোর প্রভাবে ভারতীয় এলাকায় মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এশিয়ায় শুষ্কতা দেখা দেবে।

বাংলাদেশে আবহাওয়ার ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এল নিনোর প্রভাব-কোনোটি থেকেই রেহাই পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এবার শীত ও গ্রীষ্মকাল দুটোই শুষ্ক ছিল। ভারত থেকে মৌসুমি বায়ু দেরিতে প্রবেশ করায় বর্ষাকালেও খুব বেশি বৃষ্টি হবে না তা এখন স্পষ্ট। চলতি বছর গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছেছিল। ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পাবনায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় দেশে দাবদাহের ঘটনা ঘটেছে। তবে চলতি বছর মধ্য মে থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত সাম্প্রতিক সময়ের ইতিহাসের উষ্ণ সময় মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। বৃষ্টিপাত, ঝোড়ো হাওয়া হলে সাধারণত তাপমাত্রা কমে, কিন্তু এ বছর সেটাও দেখা যাচ্ছে না।

এল নিনোর প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু সংকট থেকে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, সমাজ বাদ পড়ছে না। এ অবস্থায় এল নিনোর ভয়াবহ প্রভাবসহ সব ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলমান জলবায়ু পরিবর্তনের কার্যক্রমকে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি অভিযোজন কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সাধন সরকার : শিক্ষক ও পরিবেশকর্মী; সদস্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)

sadonsarker2005@gmail.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম