Logo
Logo
×

অল্পকথা

তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে

Icon

লিয়াকত হোসেন খোকন

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তালগাছ এখন আর সহসা চোখে পড়ে না। একসময় তালগাছের গুঁড়ি থেকে বানানো হতো ডোঙা, তালকাঠ। তালগাছের পাতা থেকে তৈরি হতো হাতপাখা, ঘরের ছাউনি, টুপি, পাটি, হাতব্যাগ, বর্ষাতি বা ছাতা ইত্যাদি। তালের আঁটি থেকে সদ্য গজানো অঙ্কুর সেদ্ধ করে খাওয়া হতো, যা পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হতো। পাকা তালের আঁশ থেকে পাওয়া যেত রেয়নের মতো সুতা, যা দিয়ে তৈরি করা হতো বস্ত্র। শক্ত তালকাঠ বাসস্থান নির্মাণে ব্যবহার হতো। প্রাচীন যুগে যখন কাগজ আবিষ্কৃত হয়নি, তখন লেখার জন্য তালপাতা ব্যবহার করা হতো।

তালগুড় ও তালপাটালি ছিল বাঙালির লোভনীয় খাবার। সেই তালগুড় আজ আর বাজারে দেখা যায় না। খুব বেশি দেখা যায় না তালপাটালি ও তালমিছরি। অনেক আগেই হারিয়ে গেছে তালপাতার হাতপাখা ও তালের ডিঙি বা ডোঙা। এখনো অনেক জাদুঘরে তালপাতার পুথি দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার ও উপযোগিতা ছাড়াও খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে তালগাছের অবদান যথেষ্ট স্বীকৃত ছিল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনে ভীষণভাবে দাগ কেটেছিল তালগাছ। তাই তিনি লিখেছিলেন, ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ তালের রস থেকে তৈরি হয় গুড়, বাদামি চিনি, তালমিছরি, তালপাটালি, তাড়ি ইত্যাদি। পাকা তালের কমলা রস বা গোলা থেকে তৈরি হয় তালবড়া, তালপিঠা, তালক্ষীর, তালবরফি ইত্যাদি। তালের আঁটি থেকে হয় অঙ্কুর, ফেঁপা, তালসুপারি, তেল ইত্যাদি। তালগাছকে বলা হয় কল্পবৃক্ষ। কারণ লোকবিশ্বাস রয়েছে, তালগাছের কাছে নাকি যা চাওয়া যায়, তা-ই পাওয়া যায়। বাবুই পাখি বাসা বাঁধে তালগাছে, বাদুড় ঝোলে তালগাছে, শকুন ও ঈগল আশ্রয় নেয় তালগাছে। সারাদিন মাঠেঘাটে ঘুরে বেরিয়ে ময়ূর রাতে ঘুমায় তালগাছের মাথায়। টিয়া পাখি ডিম পাড়ে তালগাছে। তালগাছ এক বড় আশ্রয়দাতা।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আগে প্রচুর তালগাছ ছিল। সে সময় বজ্রপাত হলেও মানুষের মৃত্যু হতো কম। কারণ তালগাছ নিজে বজ্র টেনে নিত। তালগাছ কমে যাওয়ার কারণে ইদানীং বেড়ে গেছে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা। তাই বজ্রপাতে মৃত্যু কমিয়ে আনার জন্য বেশি করে তালগাছ মাঠের আলে লাগানো উচিত। শুধু তাই নয়, ঢাকার রাস্তার দুই পাশে তালগাছ লাগানো উচিত। কিন্তু কে দায়িত্ব নেবে?

তালগাছ ও তাল ফলের এত গুণ, এত উপকারিতার কথা জেনে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে তালগাছ রোপণে উৎসাহ বাড়বে কি?

লিয়াকত হোসেন খোকন : প্রাবন্ধিক

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম