মাল্টিমিডিয়ায় আকর্ষণীয় পাঠদান
মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রাথমিক শিক্ষা হলো উচ্চশিক্ষার ভিত্তি। একটি জাতি যত বেশি শিক্ষিত, তত বেশি উন্নত। প্রাথমিক শিক্ষার আধুনিকায়নে বহু আগেই নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া ও ওয়াইফাই রাউটার সরবরাহ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে আগের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর, আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক পাঠদান চলছে এ মাল্টিমিডিয়ার বদৌলতে। আগে যেখানে চক, বোর্ড ও শিক্ষকের জ্ঞানভিত্তিক পাঠদান করা হতো, সেখানে বর্তমানে চলছে প্রযুক্তিভিত্তিক পাঠদান, যা শিশুদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও বোধগম্য। বিশেষ করে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের পাঠদান শিক্ষার্থীদের কাছে ভীতিপ্রদ না হয়ে বরং আনন্দদায়ক ও সহজ হয়েছে।
এক সময় পাঠদানে চার্ট, মডেল, পোস্টার, ছবি ও হাতে তৈরি বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হতো। আজ শিক্ষকরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করে মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে পাঠদান করেন। মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তিভিত্তিক একটি সমন্বিত বিষয়। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, প্রজেক্টর, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি ডিভাইস এতে ব্যবহার করে পাঠদান করা হয়। এর সহায়তায় ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়, প্রয়োজনের সময় তা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে ব্যবহার, পরবর্তীকালে আবার সম্পাদন করে তথ্য সংযোজন বা পরিবর্তন করা যায়। পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে অ্যানিমেশন ব্যবহার করে কম্পিউটার, প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠের সময় তা উপস্থাপন করা যায়।
প্রতিটি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া সরবরাহ করার পাশাপাশি শিক্ষকদের দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে ও সরাসরি বিভিন্ন রকম উন্নত প্রশিক্ষণ। ফলে শিক্ষকরা আইসিটিতে আগের চেয়ে দক্ষ এখন। তারা নিজ মেধা-বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে কনটেন্ট তৈরি করে শিক্ষক বাতায়নে আপলোড করে ডিজিটাল পাঠদানে সহায়তা করছেন। আকর্ষণীয় এসব কনটেন্ট ডাউনলোড করে শ্রেণি পাঠদানে ব্যবহার করতে পারছেন তারা। মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে পাঠদান করায় শিশু শিক্ষার্থীরা শ্রেণিতে অনেক আনন্দ পায়। ফলে কঠিন পাঠও তাদের কাছে সহজ ও বোধগম্য হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যালয়-ভীতি দূর হচ্ছে এবং শিশু ভর্তি ও উপস্থিতির হার দিন দিন বাড়ছে। তারা আগ্রহের সঙ্গে প্রতিটি স্লাইড দেখে এবং মনোযোগের সঙ্গে লেখাপড়া করে বোঝার চেষ্টা করে।
বর্তমান যুগ তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নত জাতিগুলোই বিশ্বে উন্নত। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় কম্পিউটার, ইন্টারনেট, প্রজেক্টর, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাব, ডিজিটালাইজড উপকরণ ব্যবহার নিঃসন্দেহে শিক্ষাকে আধুনিক, যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত করেছে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে অবশ্যই প্রযুক্তিভিত্তিক ডিজিটাল উপকরণ ব্যবহার করে পাঠদান করতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) ২০৩০-এর লক্ষ্যমাত্রা-৪-এ টেকসই, গুণগত মানসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে আইসিটি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত এবং পাঠদানকে আনন্দময় ও গ্রহণযোগ্য করতে শিক্ষকদের প্রাথমিক স্তর থেকেই মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক পাঠদান নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান : সহকারী শিক্ষক, চুনঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (জাতীয় পদকপ্রাপ্ত-২০১৬), কুলাউড়া, মৌলভীবাজার
