Logo
Logo
×

অল্পকথা

প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাধীন পাঠক

Icon

আশীষ কুমার আচার্য্য

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সরকার পরিচালিত মূলধারার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষাক্রম প্রণীত আটটি বিষয়ের মধ্যে সাতটিই বাংলা ভাষায় রচিত। ধারণা করা যায়, বাংলায় একটি শিশু ভালো পঠন দক্ষতা অর্জন করতে পারলে সে অন্যান্য বিষয় নিজের বোধগম্যতা দিয়ে রপ্ত করতে পারবে। অর্থাৎ বাংলা কেবল একটি বিষয়ই নয়, এটি অন্য বিষয়গুলো শেখার মাধ্যমও। তাই অভিভাবকদের প্রত্যাশা বাংলা পঠন দক্ষতার ওপরই বেশি থাকে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের বাংলা পঠন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ইউএসএআইডির ‘এসো শিখি’ প্রকল্পের সহায়তায় এটিকে একটি আন্দোলনে রূপ দিয়েছে, যা ‘স্বাধীন পাঠক’ তৈরির আন্দোলন।

শিক্ষণ বিজ্ঞান অনুসারে পঠন তথা পড়ার পাঁচটি মৌলিক উপাদান রয়েছে। সেগুলো হলো : ধ্বনি সচেতনতা, বর্ণজ্ঞান, শব্দজ্ঞান, পঠন সাবলীলতা ও বোধগম্যতা। যে শিশু এ পাঁচটিতে দক্ষতা অর্জন করবে, প্রত্যাশা করা যায় সে স্বাধীন পাঠক হবে। এটিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় : পড়তে শিখি ও পড়ে শিখি।

পড়তে শিখি : সাধারণভাবে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত একজন শিশু ধ্বনি শুনে তার মননে ধারণ করবে, কারও উচ্চারণ থেকে ধ্বনিটি শনাক্ত করতে পারবে, ধ্বনিটি নিজে বলতে বা উচ্চারণ করতে পারবে, ধ্বনিটি দিয়ে নতুন নতুন অর্থবোধক বা অর্থহীন শব্দ উচ্চারণ করতে পারবে, একটি শব্দ থেকে ধ্বনিগুলো ভাগ করে উচ্চারণ করতে পারবে, বর্ণটি শনাক্ত করতে পারবে, বর্ণটি লিখতে পারবে, বর্ণের সঙ্গে বর্ণ বা শব্দাংশ মিল করে পড়তে পারবে বলে প্রত্যাশা করা হয়। এগুলোই ‘পড়তে শিখি’র অংশ। এক্ষেত্রে দক্ষতার ঘাটতি থাকলে স্বাধীন পাঠক হওয়া শিশুর জন্য সময়সাপেক্ষ ও দুরূহ হয়ে পড়বে।

পড়ে শিখি : কোনো শব্দ চিনে অর্থ বুঝে বাক্যে ব্যবহার করতে পারা, কোনো শব্দ বা বাক্য স্পষ্ট ও শুদ্ধভাবে, সঠিক উচ্চারণে ও যতিচিহ্ন মেনে স্বরভঙ্গি বজায় রেখে পড়তে পারা, পড়তে গিয়ে একটি স্বাভাবিক গতি বজায় রাখতে পারা, একটি পাঠের বা অনুচ্ছেদের অর্থ ও ভাব বুঝতে পারা, সারসংক্ষেপ করতে পারা, ভাবসম্প্রসারণ করতে পারা, যথার্থতা বা গুরুত্ব নিরূপণ করতে পারা ‘পড়ে শিখি’র অংশ। প্রত্যাশা করা হয়, ৩য় শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ দক্ষতা অর্জন করবে। এভাবেই একজন শিক্ষার্থী বাংলা ভাষার একজন স্বাধীন পাঠক হয়ে উঠবে।

জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ২০২২-এর রিপোর্ট অনুসারে তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা পঠন দক্ষতার অবস্থা মোটেই সন্তোষজনক নয়। তৃতীয় শ্রেণির মাত্র ৫১ শতাংশ এবং পঞ্চম শ্রেণির মাত্র ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম শ্রেণি শেষে যেসব শিশু পড়ায় দুর্বল, চতুর্থ শ্রেণি শেষে তাদের ৯০ শতাংশই দুর্বল থেকে যায়। শিশুর নয় বছর বয়স পর্যন্ত পঠন দক্ষতার ওপর কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে সে মাধ্যমিক স্তরে একজন দুর্বল শিক্ষার্থী হিসাবে প্রবেশ করে অথবা ঝরে পড়ে। বহুমাত্রিক শিখন পরিবেশে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ শিক্ষকের আন্তরিক পাঠদানই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উৎকৃষ্ট পন্থা।

আশীষ কুমার আচার্য্য : সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি

ashis.edu.ctg@gmail.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম