Logo
Logo
×

অল্পকথা

ব্রোকেন পরিবারের সন্তান

Icon

পিয়ারা বেগম

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আবহমানকাল থেকেই আমাদের দেশে পরিবারপ্রথা চলে আসছে। মূলত স্বামী-স্ত্রী নিয়েই পরিবার গঠিত হয়। কোনো কারণে যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্কে স্থায়ীভাবে বিচ্ছেদ ঘটে, তখন ওই স্বামী-স্ত্রীর দুর্ভাগা সন্তানদের বলা হয় ব্রোকেন ফ্যামিলের সন্তান। ব্রোকেন ফ্যামিলি মানে ভাঙা সংসার! এমন পরিবারের সন্তানদের দুঃখ-কষ্ট ভোলার নয়। মা-বাবার বিচ্ছেদ কোনো সন্তানের কাছে যেমন গ্রহণীয় নয়, তেমনই স্বেচ্ছায় বর্জনীয়ও নয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে সন্তান মূলত মাতৃ ও পিতৃলালিত। এতে মা-বাবার প্রতি সন্তানদের ভালোবাসার বন্ধন থাকে সুদৃঢ়। আবার মা-বাবার প্রতিও সন্তানদের ভালোবাসার শেকড় প্রোথিত হয় গভীর মায়া-মমতায়। তাই মা-বাবার বিচ্ছেদের কঠিন বাস্তবতা সন্তানরা সহজে মেনে নিতে পারে না। এসব সন্তান হতভাগা! কারণ তাদের মা বা বাবা বেঁচে থেকেও নেই।

ব্রোকেন পরিবারের সন্তানদের কাছে সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা হলো মা-বাবার নতুন বিয়ের মুহূর্ত! মা-বাবা হয়তো নতুন সংসার পেয়ে মানিয়ে চলে। কিন্তু সন্তানরা? ওরা তো পরিবারকে আর ফিরে পায় না। উপরন্তু সমাজের মূলস্রোতের অন্যান্য সন্তানের মতো স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে দেয় না আমাদের সমাজ। ফলে বিদ্যালয়েও তাদের ঝরে পড়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। বিষণ্নতা আর হতাশা তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে করে রাখে বিষাদগ্রস্ত। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে তাদের মনোজগতে। ফলে ব্রোকেন পরিবারের সন্তানরা সাধারণত দুর্বল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়। তাদের আত্মবিশ্বাস কম থাকে। হীনম্মন্যতায় ভোগে। খড়কুটোর মতো ভাসমান এই সন্তানরা সুখী হতে পারে না দাম্পত্য জীবনেও। খোটা আর অপবাদে ওদের সংসারজীবন হয়ে ওঠে বিষময়।

ডিভোর্সি অনেক মেয়ে অনন্যোপায় হয়ে সন্তানকে নিয়েই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। স্বামী প্রথম প্রথম বেশ মোলায়েমভাবে কথা বলে। সন্তানের বাবার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। কিন্তু তার পরিবার এটা কখনোই মেনে নেয় না। ফলে শুরু হয় গৃহদাহ। প্রবাদ আছে, এক গাছের বাকল অন্য গাছে লাগে না। সন্তানটি দিনে দিনে বুঝতে পারে, এ সংসারে সে অবাঞ্ছিত, পরগাছা। সে তখন তার শেকড়কেও কাছে পায় না। দেখে অমানুষ, পাষণ্ড বাবা তাকে হৃদয় থেকে মুছে ফেলেছে। তখন সেই সন্তান হতাশাগ্রস্ত হয়। কেউ কেউ ডিপ্রেশনে ভোগে। উচ্চবিত্ত পরিবারের ব্রোকেন পরিবারের সন্তানরা নানা-নানির আদরে উচ্ছৃঙ্খল বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়। হালবিহীন নৌকার মতো গন্তব্যহীন জীবন হয় তাদের। সুতরাং স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ কমাতে হবে। বাংলাদেশে বহু অসুখী দম্পতি আছেন, যারা যন্ত্রণায় ডুবুডুবু থেকেও সংসার করছেন। তারা সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মানিয়ে-গুছিয়ে দাম্পত্য জীবন পার করছেন।

আসলে ভালোবাসা আর মোহ এক নয়। একসময় মোহ ভেঙে যায়। তখন আর সংশোধনের সময় থাকে না। তখন কঠিন বাস্তবতা একসময় প্রতিধ্বনিত হয়ে নির্মম অট্টহাসিতে বিদ্রুপ করে। আহা রে জীবন! হারিয়ে যায় যৌবনের অহংকার। অস্থিচর্মসার দেহে মর্মবেদনায় ভুগতে ভুগতে বিদায় নেয় এ পৃথিবী থেকে। তবে ক্ষণিকের মোহে পড়ে সন্তানদের কষ্ট দেওয়ার দায় থেকে রেহাই দেয় না প্রকৃতিও। কারণ প্রকৃতি ছাড় দিলেও ছেড়ে দেন না কিছুতেই।

পিয়ারা বেগম : প্রাবন্ধিক

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম