Logo
Logo
×

অল্পকথা

চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব

Icon

মো. এমদাদুর রহমান উদয়

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চিকিৎসাব্যবস্থায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য পাঁচটি মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো চিকিৎসা। আমাদের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় হাসপাতালের সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টিতে অধিকাংশ সময় উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। ক্ষতিকর এসব বর্জ্য মানবদেহের নানাবিধ ক্ষতিসাধন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল সংক্রামক রোগের কারণ হতে পারে।

দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম হলো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও কিছু এনজিও প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ব্লাড ব্যাংক ও ল্যাবরেটরি, যা সম্মিলিতভাবে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত সেবাদান করার ফলে প্রতিনিয়ত নানারকম চিকিৎসাবর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৩৫০০ টন চিকিৎসাবর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে, যার প্রায় ২০ শতাংশ মানবদেহে সংক্রামক ও জটিল রোগ সৃষ্টিতে সক্ষম।

চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করে ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব বর্জ্যরে আলাদা বিন্যাসের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালাও প্রণয়ন করেছে। ডব্লিউএইচও’র ধরন অনুযায়ী এসব বর্জ্যরে মধ্যে রয়েছে-কিছু সাধারণ বর্জ্য, ধারালো বর্জ্য (সুচ সিরিঞ্জজাতীয়), প্যাথলজিক্যাল বর্জ্য (দৈহিক কোষ, রক্ত ও টিস্যু), রাসায়নিক বর্জ্য, বিভিন্ন ব্যবহার্য ওষুধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ সামগ্রী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, উন্নত দেশগুলোতে আন্তঃবিভাগ সেবার ক্ষেত্রে রোগীপ্রতি গড়ে দৈনিক প্রায় দেড় কেজি চিকিৎসাবর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে, যার প্রায় ১৫ শতাংশই সংক্রামক। মূলত সেবাদাতা, রোগীর সঙ্গে অবস্থান করা আত্মীয় ও হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সর্বোচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন।

দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অধিক মনোযোগী হওয়া এখন সময়ের দাবি। মূলত কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ সহজ করে তোলা সম্ভব। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চিকিৎসাবর্জ্যরে উৎপাদন হ্রাসকরণে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আমাদের দেশের হাসপাতাল ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত জনগোষ্ঠীকে এ বিষয়ে সচেতন করা যেতে পারে। এছাড়া যেসব চিকিৎসা সামগ্রী সম্পূর্ণভাবে জীবাণুমুক্ত করে আবার ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসা সামগ্রী ব্যবহারের পর পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব। সবশেষে চিকিৎসাবর্জ্যে বিজ্ঞানসম্মত ও যথাযথ বিন্যাস ও ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বস্তুত চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বর্জ্যরে যথাযথ ডাম্পিং নিশ্চিত করা। বর্জ্য ডাম্পিং প্রক্রিয়া মূলত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রথমেই আসে বর্জ্য পৃথককরণ। সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাবর্জ্য রাখার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে রাখা হয়। এক্ষেত্রে ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে বর্জ্যগুলোকে বিভিন্ন কালার কোডে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। সাধারণত কাগজ, কার্টনজাতীয় অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর বর্জ্যগুলোকে কালো; সংক্রামক বর্জ্য যেমন-ব্যান্ডেজ, রক্তমিশ্রিত তুলা ও কাপড়, অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত কাপড়, পিপিই সামগ্রী ইত্যাদি হলুদ; চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত ধারালো সামগ্রীগুলো নীল; ড্রেসিং, ব্যবহৃত ক্যাথেটার, রক্ত বা বডি ফ্লুইডজাতীয় পদার্থগুলোকে লাল এবং ক্যাডমিয়াম ও পারদসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থকে সবুজ চিহ্নিত স্থানে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। সেখান থেকে হাসপাতালে কর্তব্যরত পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বর্জ্যগুলোকে স্থানান্তর করে স্টোরেজে নিয়ে যান। এরপর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বর্জ্য অপসারণ করে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়ে থাকে।

স্বাস্থ্য খাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক উপায়, ব্যবহার ও প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ খাতে টেকসই উন্নয়নে এর কোনো বিকল্প নেই।

মো এমদাদুর রহমান উদয় : শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম