|
ফলো করুন |
|
|---|---|
স্যামসন এইচ চৌধুরীর বড় সাফল্য হচ্ছে, তিনি দেখিয়েছেন সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও কীভাবে অসাধারণ হয়ে ওঠা যায়। তার বাবা ছিলেন একজন মেডিকেল প্র্যাকটিশনার। গোপালগঞ্জে জন্ম হলেও বাবার কর্মস্থল সূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে শৈশব-কৈশোর কেটেছে তার। জীবনের শুরুতে রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি এবং পরে ডাক বিভাগে চাকরি করেছেন। উদ্যোক্তা হওয়ার তীব্র বাসনা যার মনে, তাকে কি চাকরির বেড়াজালে আটকে রাখা যায়! ১৯৫২ সালে ডাক বিভাগের চাকরি ছেড়ে পাবনার আতাইকুলা বাজারে একটি ছোট ওষুধের দোকান দেন তিনি। এখানেই বসে থাকতে চাননি; ব্যবসা সম্প্রসারণে পরিকল্পনা করতে থাকেন।
১৯৫৮ সালে পাবনা শহরে চার বন্ধু প্রত্যেকে ২০ হাজার টাকা করে দিয়ে মোট ৮০ হাজার টাকা মূলধনে গড়ে তোলেন ওষুধের কারখানা। নাম দেন ‘স্কয়ার ফার্মা’। চারজন অংশীদারের সমান মালিকানা আর প্রচেষ্টায় চলার প্রেরণা থেকেই এমন নাম। স্কয়ারের নামকরণ প্রসঙ্গে স্যামসন এইচ চৌধুরী একবার একটি দৈনিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এটি চার বন্ধুর প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া আমাদের চার হাত সমান। এর লোগোও তাই বর্গাকৃতির।’ প্রথমদিকে লাভের মুখ না দেখলেও একপর্যায়ে ঘুরে দাঁড়ায় স্কয়ার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কালক্রমে প্রতিষ্ঠানটির শতভাগ মালিকানা অর্জন করেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। সেই ছোট্ট স্কয়ার আজ দেশের শীর্ষস্থানীয় তো বটেই, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোটি মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। স্কয়ারকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে স্যামসন এইচ চৌধুরীকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। একটি শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেই ক্ষান্ত হননি; আদর্শ প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছেন তিনি।
ওষুধের ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও স্কয়ার গ্রুপ ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্য উৎপাদনের মধ্য দিয়ে। এর সবটাই হয়েছে স্যামসন এইচ চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, মেধা, শ্রম আর দূরদর্শিতার জন্য। তিনি শুধু ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েই তার কাজ সীমাবদ্ধ রাখেননি, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে স্যামসন এইচ চৌধুরী ও তার পরিবারের অবদান জাতি চিরকাল স্মরণ করবে। প্রচারের আলো এড়িয়ে স্যামসন এইচ চৌধুরী সারা জীবন হাজারো মানুষের জীবন আলোকিত করতে চেয়েছেন, মৃত্যুর পরও তার জ্বালিয়ে রাখা আলো অবিনাশী বাতিঘরের মতো আমাদের পথ দেখায়।
শুরুতে স্কয়ারে জনবল ছিল ১২ জন। সেই স্কয়ার আজ ৫৫ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করে দিয়েছে। দেশে বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরি করেছে। সময়মতো বেতন-বোনাস পরিশোধ করে কর্মীদের আস্থার জায়গাটি ধরে রেখেছে। কর্মীদের কাছে স্কয়ার হচ্ছে একটি পরিবার। ভোগ্যপণ্য, বস্ত্র, মিডিয়া, তথ্যপ্রযুক্তি, হাসপাতাল, নিরাপত্তা সেবা, ব্যাংক ও বিমা, হেলিকপ্টার সার্ভিস এবং কৃষিপণ্য খাতে স্কয়ারের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০। ১৯৮৭ সালে স্যামসন এইচ চৌধুরীর হাত ধরেই স্কয়ারের উৎপাদিত ওষুধ বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়। তাদের ওষুধ বর্তমানে ৪২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বিদেশে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে এরই মধ্যে কেনিয়ায় কারখানা তৈরি করেছে। সমাজসেবায় একুশে পদকপ্রাপ্ত স্যামসন এইচ চৌধুরীর প্রয়াণ দিবসে তাকে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা।
মিজান শাজাহান : প্রাবন্ধিক
mizanshajahan@gmail.com
