Logo
Logo
×

অল্পকথা

বানান নিয়ে বিভ্রান্তি দূর হোক

Icon

সেলিম আল রাজ

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দৈনন্দিন জীবনযাপনে আমরা রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, ধর্মীয় ও নানা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নিজেদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে থাকি। বিপত্তি বাধে কিছু শব্দ লিখতে গিয়ে। যেমন কেউ লেখেন শহিদ, কেউ লেখেন শহীদ; কেউ লেখেন ঈদ, কেউ লেখেন ইদ। যেহেতু শব্দগুলোয় উভয় বানানই প্রচলিত, সেহেতু অনেকেই পড়েন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনাও চলে।

বাংলা ভাষা গোড়াপত্তনের যুগে স্বল্পসংখ্যক শব্দ দিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও নানা ভাষার সংস্পর্শে এসে এর শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে। এ অঞ্চলে তুর্কিদের আগমন এবং মুসলিম শাসন পত্তনের কারণে প্রচুর আরবি ও ফারসি শব্দ বাংলা ভাষার ভান্ডারে যুক্ত হয়েছে। এরপর এসেছে ইংরেজ শাসন এবং ইংরেজি শব্দের প্রয়োগ। এভাবে বাংলা ভাষায় প্রায় দেড় লাখ শব্দের এক বিশাল ভান্ডার রয়েছে। বাংলা ভাষার শব্দকে ভাষাবিজ্ঞানীরা বুৎপত্তিগত দিক থেকে তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি মোট পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। বাংলা একাডেমি প্রদত্ত প্রমিত বাংলা বানানে হ্রস্ব ই-কারের ব্যবহার বেড়েছে। সাম্প্রতিক এ প্রয়োগের ফলে হ্রস্ব ই, দীর্ঘ ঈ-এর ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক মতানৈক্য দেখা যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ আজম তার এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, ‘উনিশ-বিশ শতকে যারা সংস্কৃতের অনুসরণে বাংলা বানাননীতি নির্ধারণ করেছিলেন, তারা এমন বহু শব্দেও ঈ লিখেছিলেন, যেগুলো তৎসম শব্দ নয়। ফলে বিশৃঙ্খলা বাড়ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরোক্ষ নেতৃত্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বানান কমিটি এ ব্যাপারে একটি ফয়সালা করেছিল। সেটা এ রকম-তৎসম শব্দের বানানে সংস্কৃত নিয়ম অনুযায়ী ঈ লেখা হবে, কিন্তু অ-তৎসম শব্দের বানানে ঈ বানান চলবে না। এ নিয়ম তখন থেকে মোটের ওপর কার্যকর আছে।’

এ কথা নিশ্চিত, কালে কালে বহু বানানে পরিবর্তন এসেছে। যেমন: আরবি, ফারসি, জাপানি প্রভৃতি বানানে আগে দীর্ঘ ঈ ব্যবহার করা হতো, এখন হ্রস্ব ই ব্যবহৃত হচ্ছে। ঈদ/ইদ বানান নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে বাংলা একাডেমির তখনকার মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান লিখেছিলেন, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে প্রথম বানান হিসাবে ঈদ এবং বিকল্প বানান হিসাবে ইদ দেওয়া আছে। প্রথম বানানটি প্রচলিত, দ্বিতীয় বানানটি সংস্কারকৃত। কোনো মানুষ দীর্ঘকাল কোনো বানান ব্যবহার করলে তা ঐতিহ্যে পরিণত হয়ে যায়। ঈদ বানানটি তেমনই। অতএব দুটি বানানই ব্যবহার করা যায়।

এবার আসা যাক শহিদ বানান প্রসঙ্গে। শহিদ আরবি শব্দ। বাংলা একাডেমি ছাড়াও অন্যান্য অভিধানে শহিদ শব্দটি লিপিবদ্ধ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি শব্দটিকে হিন্দি উল্লেখ করে শহিদ বানানটি অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। শৈলেন্দ্র বিশ্বাসকৃত সংসদ বাংলা অভিধানে শহিদ, শহীদ দুভাবেই লিপিবদ্ধ আছে। কতগুলো শব্দের ক্ষেত্রে দেখা যায় নানাজনে নানারকম বানান লিখছেন। এসব পরিহারের জন্য বাংলা বানানের একক রীতি হওয়া দরকার। তা না হলে পড়তে ও পড়াতে গিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে। এছাড়া প্রায়ই দেখা যায়-বাংলাদেশী, ডিগ্রী, নবী, শ্রেণী, খ্রীষ্টাব্দ, সরকারী, বেসরকারী, লাইব্রেরী, শ্রদ্ধাঞ্জলী ইত্যাদি শব্দে ঈ-কারের ব্যবহার, যা ব্যাকরণসম্মত নয়। এসব শব্দ সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন কাগজপত্র থেকে সরানোর উদ্যোগ না নিলে ভুল বানানের প্রচলন রয়ে যাবে এবং আমরা ভুলটা শিখতে থাকব। তাই বেশি প্রচলিত শব্দগুলো শুদ্ধভাবে লেখার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা উচিত। যে কোনো ভাষার বানানরীতি নির্ধারণ করার কাজটা মূলত রাষ্ট্রের। আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি এ দায়িত্ব পালন করছে। নতুন কিংবা সংস্কারকৃত বানান নিয়ে সমালোচনা হতে পারে। তারপরও ঠিক বানানই প্রয়োগে ব্রতী হতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমির স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা দরকার।

সেলিম আল রাজ : প্রভাষক, গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, ময়মনসিংহ

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম