অপরিকল্পিত নগরায়ণে বাড়ছে ঝুঁকি
মো. এমদাদুর রহমান উদয়
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ জীবনব্যবস্থায় অভ্যস্ত মানুষ তাই যুগে যুগে সৃষ্টি করে এসেছে বসতি, নগর, মহানগর। জীবিকার তাগিদে মানুষ ছুটে চলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। গড়ে তোলে বিভিন্ন নগরী। মূলত এ বিষয়কে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন স্থানভেদে নগরায়ণের ধারণার উদ্ভব ঘটেছে। নগরায়ণ মূলত একটি চলমান প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে নগর কেন্দ্রগুলোর সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ঘটে। এটি একটি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত কাঠামোর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও উন্নত ও টেকসই নগরায়ণের পথে হাঁটছে। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম এদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও নগরায়ণের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দেশের সার্বিক শিল্প ও অর্থনীতির উন্নয়নে এর কোনো বিকল্প নেই। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি শহরে অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ইতোমধ্যে নানাবিধ জটিলতার উদ্ভব ঘটেছে। তাই অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণ উদ্ঘাটনের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
অপরিকল্পিত নগরায়ণের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অধিক জনসংখ্যা এবং মানুষের শহরমুখী হওয়ার চাপ। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ হওয়ায় জীবিকার তাগিদে মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে আসছে। শহরাঞ্চলে কাজের সুযোগ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলক বেশি থাকায় মানুষের এই শহরমুখী চাপের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ শহরাঞ্চলে বাস করে। এর মধ্যে প্রায় দুই কোটি মানুষের বাস রাজধানী ঢাকায়। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় নানা শিল্পকারখানা। এগুলোর অধিকাংশ ভবনই অপরিকল্পিত এবং রাজউকের ভবন নীতিমালাবহির্ভূত। ফলে এসব ভবন মানুষের জানমালের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হচ্ছে। বাড়ছে অগ্নিকাণ্ড ও ভবনধসের মতো ঘটনা। এছাড়া এসব ভবন তৈরির জন্য জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। ফলে আবাদি জমি বিনষ্ট করে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার মতো ঘটনাও লক্ষ করা যায়। এতে একদিকে যেমন খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অপরদিকে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে রাস্তা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে রাজধানীতে যানজট সমস্যা নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যানজটের কারণে সময় ও কর্মক্ষমতার অপচয় হচ্ছে। এছাড়া নগরায়ণের ফলে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা মানুষের এক বিরাট অংশ কর্মসংস্থান ও সাধারণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে বাড়ছে বেকারত্ব, ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে বস্তি সমস্যা। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে প্রতিবছর হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। সুপেয় পানির স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি খাল-বিল ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। তাই বনভূমির পরিমাণ কমে গিয়ে তা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ভূকম্পনের সাক্ষী হয়েছে, যা অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রভাব বলে মনে করা হয়। নগরায়ণ একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তাই টেকসই নগরায়ণের বাস্তবায়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ প্রতিরোধে যথাযথ কার্যক্রম নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। টেকসই নগরায়ণ নিশ্চিতকরণে চিহ্নিত সেবামূলক কার্যক্রমগুলো বিকেন্দ্রায়নের দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া শহরমুখী মানুষের চাপ সামলাতে ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে মানুষকে গ্রামীণ কর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। শহরাঞ্চলে শিল্পকারখানা নির্মাণে নীতিমালা অনুমোদন এবং যথাযথ তদারকির ব্যবস্থা করে অপরিকল্পিত নগরায়ণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। শহরাঞ্চলের পরিবেশকে আরও সুন্দর ও বাসযোগ্য করার জন্য বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি জোরদার করা জরুরি।
মো. এমদাদুর রহমান উদয় : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
