Logo
Logo
×

অল্পকথা

মানবতার সেবায় রেড ক্রিসেন্ট

Icon

এম এ হালিম

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আবহমানকাল থেকেই বিশ্বের দেশে দেশে মানবিক সংকট বিরাজমান, যার কারণ কখনো প্রাকৃতিক, কখনো মানবসৃষ্ট; যেমন যুদ্ধ, হানাহানি ইত্যাদি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ২০২৩-এর অক্টোবর থেকে চলমান হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ আর একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত তুরস্কের ভূমিকম্প পৃথিবীব্যাপী মানবিক সংকটের কিছু সাম্প্রতিক উদাহরণ। জানা যায়, ২০২৩ সালে বিশ্বে ৩৯৯টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে; যার কারণে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৮৬ সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া চলমান গাজা সংকটের কারণে প্রতিদিন গড়ে একশ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে বহমান তাপপ্রবাহে এবং অনেক দেশে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা অন্তহীন। বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক নেটওয়ার্ক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের অংশীদার ১৯২টি জাতীয় রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি প্রায় দেড় কোটি স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে এসব দুর্যোগ ও সংকটে মানবিক সেবা পরিচালনা করছে প্রতিনিয়ত। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) তার বিশেষ ম্যানডেট বলে এবং জেনেভা কনভেনশনের প্রচারক (প্রমোটার) হিসাবে যুদ্ধবন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ নিশ্চিতকরণে রাখছে সজাগ দৃষ্টি।

আজ বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস। ১৯৪৮ সাল থেকে রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের উদ্যোক্তা জিন হেনরি ডুনান্টের জন্মদিন ৮ মে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস হিসাবে উদ্যাপন করা হচ্ছে। কারণ, বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ মানবিক নেটওয়ার্কের সূচনার সঙ্গে হেনরি ডুনান্টের অবদান অবিচ্ছেদ্য।

যুদ্ধকালে মানবিক সেবার লক্ষ্যে রেড ক্রস প্রতিষ্ঠা হলেও কালের বিবর্তনে এ সংস্থার সেবার ক্ষেত্র অনেক প্রসারিত হয়েছে। রেড ক্রস তার প্রচলিত ভূমিকা তথা শুধুই যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী মানবিক সেবায় নিয়োজিত নয়, বরং হালে কীভাবে মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের বিপন্নতা কমিয়ে ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা যায় সে লক্ষ্যকে গুরুত্ব প্রদান এবং তদানুসারে উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এছাড়া বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মানুষ ও সমাজের অধিক বিপন্নতা ও ঝুঁকি হ্রাসেও এ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন উদ্যোগ ও কার্যক্রম গ্রহণ করছে। এ বছর দিনটির প্রতিপাদ্য হলো ‘Keeping Humanity Alive’-‘বাঁচিয়ে রাখি মানবতা’। রেড ক্রস প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তিগত অবদানের জন্য জিন হেনরি ডুনান্টকে ১৯০১ সালে প্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কার ও মানবিক সেবায় অবদানের জন্য এ প্রতিষ্ঠানকে তিনবার (১৯১৭, ১৯৪৪ ও ১৯৬৩) নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর যুদ্ধাহতদের সেবা এবং পরবর্তী সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক সংকটে সেবা প্রদান করে চলেছে। চলমান তাপপ্রবাহেও দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংস্থাটি ভুক্তভোগী মানুষের সেবায় নিয়োজিত। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানকারী ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে বিভিন্ন মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। সরকার মুক্তিযুদ্ধকালীন ও যুদ্ধোত্তর মানবিক সেবার জন্য আইসিআরসিকে ২০১২ সালে Friends of Liberation War Honour প্রদান করেছে।

১৬১ বছর আগে ইউরোপে সূচনা হলেও আজ বিশ্বজুড়ে যে কোনো মানবিক সংকটে কাজ করছে ১৯২টি দেশে ছড়িয়ে থাকা রেড ক্রস অথবা রেড ক্রিসেন্ট।

এম এ হালিম : সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি

halim_64@hotmail.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম