Logo
Logo
×

অল্পকথা

ঘরের ভেতরে গম চাষ!

Icon

প্রদীপ সাহা

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের চারপাশের পরিবেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে ভবিষ্যতে বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। চরম আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানির অভাবের মতো কারণে খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি দিন দিন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে জার্মানির গবেষকরা ঘরের ভেতরে বা অল্প জায়গায় গম চাষ করতে সক্ষম হয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা এ সমস্যার কিছুটা সমাধান করার চেষ্টা করছেন। ক্লাইমেট চেম্বারের মধ্যে গমগাছ মাত্র সাত সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়। কিন্তু মাত্র দশ সপ্তাহের মধ্যে এ বিশেষ জাতের গম ফসল তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। বছরে ছয়বার এভাবে ফসল পাওয়া যাবে। জার্মানির প্রকল্প ম্যানেজার সেবাস্টিয়ান আইশেলবাখার বলেছেন, গাছ ভালোভাবেই বেড়ে উঠছে; ফুলও এসে গেছে। সবুজ জৈব পদার্থ মরে গিয়ে শস্য পড়ে থাকছে। দানাগুলোও বেশ ভরা থাকে। বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে আমরা আরও বেশি সময়ের জন্য দিনের আলোর ব্যবস্থা করতে পারি। বেশি ঠান্ডা বা বেশি গরম জায়গার জন্য বিশেষ সময় স্থির করার প্রয়োজন হয় না। যেমন ২৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ১৮,২০ বা ২২ ঘণ্টার জন্য দিনের আলোর ব্যবস্থা করে এ উদ্ভিদ চাষ করা যায়। এ পদ্ধতিতে চাষ করলে বেশি ফসল পাওয়া যাবে বলে গবেষকরা মনে করেন।

জার্মানির মিউনিখ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল কৃষি বিভাগের দল আলো, তাপমাত্রা, পুষ্টির জোগান ও পানি নিয়ন্ত্রণ এসব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। প্রকল্পের জন্য তারা অর্থায়নও করেছে। প্রধানত পানি ও পুষ্টির মিশ্রণ ব্যবহার করায় পানির পুনর্ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে পানির একটি স্তর বাষ্পীভূত হয় না। ফলে প্রচলিত কৃষিকাজের তুলনায় পানির চাহিদা ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কম হতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে পানিই সবচেয়ে অনিশ্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে।

জার্মানিতে গম উৎপাদনের পরিমাণ মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও বিশ্বজুড়ে গমের উৎপাদন কমে আসছে। খরা ও বন্যা মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। বাভারিয়ায় চলতি বছর গ্রীষ্মকালে বেশ কয়েকবার প্রবল বৃষ্টিপাত সামাল দিতে হয়েছে। ফসলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো এখন পশুর খাদ্য হিসাবে বিক্রি করার পালা। অন্যান্য শস্যের মতো এ শস্যও একই জাতের। কোনোভাবেই রুটি তৈরির কাজে লাগানো যাবে না। চরম বৃষ্টি থেকে চরম শুষ্কতা, তারপর আবার বৃষ্টি-বছরটায় যেন চরম আবহাওয়া বিরাজ করছে। তবে শুধু খরা বা বন্যাকবলিত অঞ্চলে অল্প জায়গায় গম উৎপাদন সার্থক হবে তা নয়; জার্মানির মতো দেশে পরিবেশের ওপর কৃষি উৎপাদনের নেতিবাচক প্রভাব কমাতেও এ প্রক্রিয়া সহায়ক হতে পারে। গম চাষের একাধিক সুবিধা রয়েছে। যেমন অত্যন্ত কম পানির প্রয়োজন হয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না, শস্য সুরক্ষার প্রয়োজন হয় না, তেমনি অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে পুষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে জ্বালানির ব্যবহার অত্যন্ত বেশি হয়। ভবন ও প্রযুক্তিগত সাজসরঞ্জাম বেশি, যা কার্বন নির্গমনের কারণ বটে। এমন অবস্থায় এ প্রকল্প বিশ্বের কাছে সমাধানসূত্র হিসাবে পেশ করার সময় আসেনি। কিন্তু খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় একে একটি ‘বিল্ডিং ব্লক’ বলা যায়। সিঙ্গাপুর, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশ এ প্রকল্পে আগ্রহ দেখাচ্ছে। জায়গা থেকে শুরু করে পানির অভাবের মতো কারণে ঘরের ভেতরে গম চাষ একটি সম্ভাবনাময় বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। এ প্রকল্প আমাদের দেশের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনতে পারে কিনা, তা অবশ্যই ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে।

প্রদীপ সাহা : প্রাবন্ধিক

pradipsaha509@gmail.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম