|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাদুঘর হলো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক, এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন নমুনার সংগ্রহশালা। দেশের ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, নৃ-তাত্ত্বিক, ভূতাত্ত্বিক, শিল্পকলা, প্রাকৃতিক ও প্রাণিবিষয়ক নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও গবেষণার উদ্দেশ্যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। আজ ১৮ মে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম (আইকম) ১৯৭৭ সালে মস্কোয় অনুষ্ঠিত ১২তম সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিবছর ১৮ মে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস হিসাবে পালন করার। ১৯৭৮ সালের ১৮ মে প্রথমবারের মতো জাদুঘর দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।
বিশ্বে প্রথম জাদুঘর স্থাপিত হয় মিসরের কায়রোয়। এশিয়া মহাদেশে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৮৪ সালের ১৫ জানুয়ারি এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশদের মাধ্যমে উপমহাদেশে জাদুঘরের ধারণা তৈরি হয়। ভারতীয় এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যরা জাদুঘরের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এশিয়াটিক সোসাইটির পৃষ্ঠপোষক লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে জাদুঘর নির্মাণের জন্য জমির ব্যবস্থা করে দেন এবং ১৮০৮ সালে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। উপমহাদেশের প্রথম জাদুঘর ‘এশিয়াটিক সোসাইটিক মিউজিয়াম’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮১৪ সালে।
১৮৫৬ সালের ১ নভেম্বর ‘দ্য ঢাকা নিউজ’ পত্রিকায় প্রথম ঢাকায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে আঠারো শতকে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ অপ্রত্যাশিতভাবে ঢাকায় জাদুঘর প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি করে। তবে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রহিত হওয়ায় সরকারি উদ্যোগে জাদুঘর স্থাপনের প্রচেষ্টা থেমে যায়। কিন্তু ঢাকার বিশিষ্ট নাগরিকরা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার জন্য সোচ্চার হন। ১৯১২ সালের ২৫ জুলাই বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেলের ঢাকা আগমন উপলক্ষ্যে নর্থব্রুক হলে তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নাগরিকরা ঢাকায় একটি জাদুঘর স্থাপনের দাবি উত্থাপন করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ২ হাজার রুপি মঞ্জুর করেন। ১৯১৩ সালের ৫ মার্চ জাদুঘর স্থাপনের জন্য সরকারি অনুমোদনের গেজেট প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ সালের ২০ মার্চ তৎকালীন সচিবালয়ের (বর্তমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) একটি কক্ষে জাদুঘরের নিদর্শন সংরক্ষণের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট লর্ড কারমাইকেল ঢাকা জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ১৯১৪ সালের ৬ জুলাই নলিনীকান্ত ভট্টশালীকে জাদুঘরের কিউরেটর নিযুক্ত করা হয়। ১৯১৪ সালের ২৫ আগস্ট সর্বসাধারণের জন্য জাদুঘর খুলে দেওয়া হয়। জাদুঘরের নিদর্শন সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ১৯১৫ সালের জুলাইয়ে নিমতলীতে জাদুঘরটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালের ১৭ নভেম্বর শাহবাগে নিজস্ব আধুনিক ভবনে স্থানান্তরিত হয় জাদুঘর। ৮.৬৩ একর জমির উপর একটি চারতলা আধুনিক ভবনে গড়ে ওঠে জাতীয় জাদুঘর। এ জাদুঘরে ৪৪টি প্রদর্শনী কক্ষ, তিনটি অডিটোরিয়াম, একটি গ্রন্থাগার ও দুটি অস্থায়ী প্রদর্শনী কক্ষ রয়েছে। জাদুঘরে সংগৃহীত নিদর্শন রয়েছে ৮৫ হাজারের বেশি।
তবে দেশের প্রথম জাদুঘর রাজশাহীতে অবস্থিত বরেন্দ্র জাদুঘর, যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১০ সালে। এ জাদুঘরে প্রায় ৯ হাজার পুরাকীর্তি রয়েছে। রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও উপজেলায় জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব মিলে দেশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির জাদুঘরের সংখ্যা শতাধিক।
অতীত ও বর্তমানের সেতুবন্ধন হচ্ছে জাদুঘর। নিদর্শনভিত্তিক গবেষণা ও শিক্ষা বিস্তারে জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি দেশের পর্যটনশিল্পকে সমৃদ্ধ করতেও জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রকাশ ঘোষ বিধান : প্রাবন্ধিক
