|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয় অ্যাপগুলোর মধ্যে টিকটক অন্যতম। বর্তমানে ছোট ভিডিও তৈরির এসব অ্যাপ বিনোদনের পরিবর্তে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনপ্রিয়তা ও বিনোদনের সস্তা মাধ্যম হওয়ায় এই অ্যাপ এখনকার তরুণ-তরুণীদের কাছে মাদকের নেশার মতো। আর এ নেশা জন্ম দিচ্ছে ভয়ংকর সব ঘটনার এবং জীবনকে ফেলছে ঝুঁকিতে।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, টিকটক করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঝরে পড়ছে তাজা প্রাণ। একইসঙ্গে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও নৈতিকতা। বর্তমানে টিকটক অ্যাপ ভিডিওকে ঘিরেও চলছে নানা অপকর্ম। গত ২৫ এপ্রিল ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে টিকটক করতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে পাঁচ বন্ধু ঝাঁপ দেয়। তাদের মধ্যে মশিউর রহমান হুজ্জাত নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এছাড়াও গত ১৩ এপ্রিল ফুফাতো বোনকে নিয়ে টিকটকের ভিডিও বানাতে গিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাটের তিস্তা নদীতে ডুবে মো. সোহাগ নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এর আগে গত বছরের ১৪ জুলাই টিকটক করতে গিয়ে কুমিল্লা জেলার লালমাইয়ে মো. সিয়াম হোসেন মোল্লা নামে এক কিশোর ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায়। এছাড়াও গত বছরের ৭ জুলাই নোয়াখালীর স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এক কিশোরীর মৃত্যু ঘটে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে। বস্তুত শিশু-কিশোর, তরুণ কিংবা বৃদ্ধ কেউই বাদ পড়ছে না টিকটক আসক্তি থেকে। শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এসব ভিডিও তৈরি কিংবা উপভোগ করতে গিয়ে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়কে হারিয়ে ফেলছে নিজের অজান্তেই। যে সময়ে তাদের সিলেবাস শেষ করার কথা, সে সময়টাতে তারা টিকটক নামের এই অপ্রয়োজনীয় এবং সময় অপচয়কারী প্লাটফর্মে নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে।
অনেক স্বপ্নবাজ মানুষই টিকটক ঘিরে ভুল স্বপ্নে বিভোর থাকছে। অযৌক্তিকভাবে ভাইরাল হওয়ার যে প্রবণতা এসব ব্যক্তির মধ্যে কাজ করছে, তার শেষ পরিণতি ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বর্তমানে টিকটক প্লাটফর্মে যেসব কনটেন্ট সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে শিক্ষণীয় কোনো বিষয় নেই। তথাকথিত টিকটক কনটেন্টগুলো এমন একটি প্রজন্ম তৈরি করে চলেছে, যারা আগামীতে শারীরিকভাবে অযোগ্যতার পরিচয় দেবে। কারণ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিভাইসের সামনে বসে থেকে এসব টিকটক ভিডিও এডিটিং কিংবা উপভোগ করতে গিয়ে বাড়ছে শরীরের ওজন, দেহে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন রোগব্যাধি। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে এটা কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে বর্তমান প্রজন্মকে রক্ষা করতে প্রয়োজন সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণ প্রজন্মকে টিকটক অ্যাপের অন্ধকার জগৎ থেকে বের করে আনতে তাদেরকে পুনরায় বাস্তবমুখী করে তুলতে হবে। বাইরের জগতের সঙ্গে নতুনভাবে সম্পৃক্ত করার সুযোগ করে দিতে হবে। খেলাধুলায় সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করতে হবে। এবং টিকটকের অপব্যবহারের ভয়াবহতা সম্পর্কে বাড়াতে হবে সচেতনতা। প্রয়োজনে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের শিক্ষিত ও সচেতন শ্রেণির মানুষকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে এ সমস্যার একটি সুষ্ঠু সমাধানের জন্য। পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠার আগেই সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
সানোয়ার হোসেন : সাংবাদিক
sanowarhossain.iu@gmail.com
