|
ফলো করুন |
|
|---|---|
একাডেমিক শিক্ষা মানুষ স্কুল-কলেজে শিখলেও নৈতিক শিক্ষা মূলত পরিবার থেকেই শুরু হয়। আর এটি প্রত্যেক মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা। নৈতিক শিক্ষা কাকে বলে? এক কথায় বলা যায়, ভালো-মন্দের বিচার করার মানদণ্ডই হলো নৈতিকতা।
একজন মানুষ যতই শিক্ষিত হোক না কেন, তার মধ্যে যদি নৈতিকতা বোধ না থাকে, তাহলে তার মধ্যে পরিপূর্ণ মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না। তার দ্বারা সমাজে আর যাই হোক, ভালো কিছুর আশা করা যায় না। একজন শিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষের দ্বারা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বা সংঘটিত হয়; কিন্তু একজন নৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের দ্বারা কখনোই অপরাধ বা সমাজে ঘৃণ্য কার্যকলাপ ঘটা সম্ভব নয়। নৈতিকতার জন্য কখনো কাউকে অপরাধী করা যায় না। তাই এটি জোরপূর্বক কাউকে শোধরানো যায় না। যেমন, আমি যদি কোনো মানুষকে হত্যা করার মতো অপরাধ করি, তাহলে আমাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে; কিন্তু আমার কাছে কেউ সাহায্য চাইলে যদি সামর্থ্য থাকার পরও না দেই, তাহলে আমাকে কেউ আইনানুগভাবে কোনো সাজা বা দোষ দিতে পারবে না। আমার সামর্থ্য ছিল কিন্তু আমি সাহায্য করিনি, করলে সেই ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের কাজে নিজেকে শামিল করতে পারতাম।
বড়দের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার এবং ছোটদের স্নেহ করা, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা ইত্যাদি আমাদের সমাজ থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা বুঝতে পারি, সমাজের বা আমাদের আশপাশের মানুষদের মধ্যে নৈতিকতার অভাব দেখা দিচ্ছে। নৈতিকতা না থাকলে সমাজকে সুন্দর করা সম্ভব নয়। এজন্যই দিন দিন মানুষে মানুষে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেড়েই চলেছে। নৈতিক শিক্ষার অধঃপতনের কারণেই আজ অল্পবয়সি ছেলেরা কিশোর গ্যাংয়ের মতো অপরাধ সংগঠন তৈরি করছে।
নৈতিক শিক্ষার এই অভাবের কুফল আমরা পাচ্ছি, সমাজ পাচ্ছে। সমাজে বিভিন্ন ধরনের অরাজকতা তৈরি হচ্ছে, যেমন-ইভটিজিং, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, শিশু হত্যা, এমনকি সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য নিজের মা-বাবাকে মারধর অথবা হত্যা করার মতো অপরাধও এখন ঘটছে। একজন শিক্ষক, যিনি জাতির মেরুদণ্ড তৈরি করবেন, তার কাছ থেকেও এমন আচরণ পেলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তার কিন্তু একাডেমিক শিক্ষা আছে; কিন্তু নৈতিক শিক্ষা নেই বিধায় এহেন অপরাধ করতে তার বিবেকে বাধেনি। এ থেকেই বোঝা যায়, শুধু পাঠ্যশিক্ষা অর্জন করলেই হবে না, প্রকৃত মানুষ হতে হলে নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই। এটি যেহেতু পরিবার থেকেই শুরু হয়, তাই আসুন আমরা সবাই সতর্কতা অবলম্বন করি এবং সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই নৈতিক গুণে গুণান্বিত করে তোলার মাধ্যমে সমাজে সুবাতাস ছড়িয়ে দেই। এ সমাজকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করি।
মোহাম্মাদ আশিক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
