Logo
Logo
×

অল্পকথা

বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল পথচলা

Icon

ইমরান ইমন

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালিত হয়। বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষীদের মহান আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ২০০৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ১৯৮৮ সালে ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল পথচলা। পরবর্তী কয়েক বছর বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী বেশ সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে আসছে। ১৯৯৩-৯৪ সালে বহুল আলোচিত রুয়ান্ডা, সোমালিয়া ও বসনিয়া-এই তিনটি শান্তি মিশনে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আলোচনার কেন্দ্রে আসে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সেনাবাহিনী দক্ষতা ও সামরিক জ্ঞানে রুয়ান্ডায় বেলজিয়ান, সোমালিয়ায় আমেরিকান এবং বসনিয়ায় ফরাসি সেনাবাহিনীকে যে টেক্কা দিতে পারে, তা জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট দেশের কর্মকর্তাদের চিন্তার বাইরে ছিল। ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তখন থেকেই বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হতে থাকে। তাছাড়া ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড গ্রুপ সেখানে নিয়োজিত ছিল। প্রায় ১০০ দিনের গৃহযুদ্ধে তখন ৬ লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়। গৃহযুদ্ধ শুরু হলে বেলজিয়ানসহ আফ্রো-ইউরোপিয়ান ব্যাটালিয়নগুলো দ্রুত তাদের মিশন গুটিয়ে ফেললেও বাংলাদেশের সেনাসদস্যরা অসীম সাহস নিয়ে মিশন এলাকাতেই থেকে যান। ফলে গণহত্যায় মৃত্যুর হার অনেক কম হয়েছিল। জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকেও সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হয়েছিল। বাংলাদেশি সৈনিকদের এমন সাহস ও দক্ষতা দেখে তখন সবাই অবাক হয়েছিল। সোমালিয়া থেকে শান্তিমিশন গুটিয়ে নেওয়ার সময় আমেরিকান সেনাদের দাবি ছিল, তাদের শেষ সৈনিক সোমালিয়া না ছাড়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সেনাদের তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। সোমালিয়ার জনগণের হৃদয় জয় করে বাংলাদেশিরা নিজেদের অবস্থানকে সেখানে সুদৃঢ় করে নিয়েছিলেন। স্থানীয় জনগণের আস্থা আর ভালোবাসাই জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশি সেনাদের মূলশক্তি। প্রতিটি মিশনেই বাংলাদেশিদের এ দক্ষতা জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের মুগ্ধ করেছে। ব্যক্তিগত শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক আর সামরিক দক্ষতার জন্য যে কোনো সামরিক কমান্ডারের কাছে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনী এ বছর ৩৬ বছর (১৯৮৮-২০২৪) পূর্ণ করল। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশের অন্যতম অর্জন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসাবে শীর্ষস্থান ধরে রাখা। একসময় যেসব দেশের সাধারণ মানুষ ‘বাংলাদেশ’ শব্দটির সঙ্গেই পরিচিত ছিল না, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের কারণে সেসব দেশে এখন বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে অতি ভালোবাসার দেশ; লাল-সবুজের পতাকা হয়ে উঠেছে আবেগ ও শ্রদ্ধার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বশান্তি রক্ষায় অবদান রাখা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের বিনম্রচিত্তে স্মরণ করছি।

ইমরান ইমন : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

emoncolumnist@gmail.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম