Logo
Logo
×

অল্পকথা

রাসেল’স ভাইপার কতটা ভয়ংকর

Icon

মো. এমদাদুর রহমান উদয়

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে রাসেল’স ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। একে দেশে চন্দ্রবোড়া বলা হয়। মূলত এর গায়ের চামড়ায় চাঁদের মতো ছোপ ছোপ দাগ থাকায় এ নামকরণ হয়েছে। ভারতবর্ষের অত্যন্ত বিষধর পাঁচটি সাপের মধ্যে রাসেল’স ভাইপার অন্যতম। এ সাপ মূলত ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও নেপালে দেখা যায়। আগে দেশের শুধু রাজশাহী অঞ্চলে এ সাপ দেখা যেত। এ কারণে এটি বরেন্দ্র অঞ্চলের সাপ বলে পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে বিভিন্ন বন-জঙ্গল, কৃষিজমি ও শুষ্ক অঞ্চলে এ সাপ বেশি দেখা যাচ্ছে। এর কামড়ে মৃতের সংখ্যাও ক্রমে বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলে রাসেল’স ভাইপারকে অনেকে অজগরের বাচ্চা ভেবে ভুল করে থাকে। ফলে সাপ ধরতে বা মারতে গিয়ে অনেকে দংশনের শিকার হচ্ছে।

চন্দ্রবোড়ার দেহ মোটাসোটা, লেজ ছোট ও সরু। এর মাথা চ্যাপ্টা, ত্রিভুজাকার এবং ঘাড় থেকে আলাদা। থুতনি ভোঁতা, গোলাকার এবং উপরের দিকে উঠানো। এ সাপ ক্ষিপ্র প্রকৃতির। প্রাপ্তবয়স্ক সাপের দেহের দৈর্ঘ্য সাধারণত এক মিটার; দেহের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১.৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে স্ত্রী সাপের দৈর্ঘ্য পুরুষের চেয়ে বেশ ছোট হয়ে থাকে। এদের বংশ বিস্তার পদ্ধতি অন্যান্য প্রজাতির চেয়ে ভিন্ন। সাধারণত সাপের বেশিরভাগ প্রজাতি ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। তবে চন্দ্রবোড়া সাপ ডিম পাড়ার পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা দেয়। ফলে এ সাপের বাচ্চাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এরা বছরের যে কোনো সময় প্রজনন করে। তবে মে থেকে আগস্টের মধ্যবর্তী সময়ে প্রজনন ঘটে বেশি। একটি স্ত্রী সাপ ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়।

রাসেল’স ভাইপার সাধারণত ঘাস, ঝোপ, বন, ম্যানগ্রোভ ও ফসলের খেতে, বিশেষত নিচু জমির ঘাসযুক্ত উন্মুক্ত ও কিছুটা শুষ্ক পরিবেশে বাস করে। স্থলভাগের সাপ হলেও এটি জলে দ্রুতগতিতে চলতে পারে। ফলে বর্ষাকালে কচুরিপানার সঙ্গে বহুদূর পর্যন্ত ভেসে যেতে পারে। এরা নিশাচর এবং খাদ্য হিসাবে ইঁদুর, ছোট পাখি, টিকটিকি ও ব্যাঙ খেয়ে থাকে। বসতবাড়ির আশপাশে চন্দ্রবোড়ার খাবারের প্রাচুর্য থাকায় এদেরকে অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসতে দেখা যায়।

রাসেল’স ভাইপার সাধারণত স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আক্রমণ করে না, কিন্তু একটি সীমার পর তাকে বিরক্ত করলে প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। পৃথিবীতে প্রতিবছর যত মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মৃত্যু হয় রাসেল’স ভাইপারের কামড়ে। তবে এই সাপ ‘মানুষ দেখে তেড়ে এসে কামড়ায়’ এ কথা গুজব মাত্র। এরা মূলত এক জায়গায় চুপ করে পড়ে থাকতে পছন্দ করে। মানুষ বা বড় কোনো প্রাণী সামনে এলে ইংরেজি ‘এস’ আকৃতির কুণ্ডলি পাকিয়ে জোরে হিস্ হিস্ শব্দ করে। এটি মূলত আক্রমণের আগের সতর্কবার্তা। এরপরও তাকে বিরক্ত করা হলে তবেই অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছোবল মারে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, রাসেল’স ভাইপার এক সেকেন্ডের ষোল ভাগের এক ভাগ সময়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম। রাসেল’স ভাইপারের বিষ সাধারণত হিমোটক্সিক। এটি অত্যন্ত মারাত্মক ও প্রাণঘাতী বিষগুলোর অন্যতম। এই বিষ দেহে প্রবাহিত রক্তকে অতি দ্রুত জমাট বাঁধিয়ে দেয়। তাই সাপ কামড়ালে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। আমাদের দেশে সাপ কামড়ালে ওঝারা সাধারণত ক্ষতস্থানে শক্ত বাঁধন দেয় অথবা মুখ দিয়ে বা ক্ষতস্থানের চামড়া কেটে রক্ত প্রবাহিত করে থাকে। তবে এগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, রাসেল’স ভাইপার কামড়ানোর এক ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে যদি প্রায় ১০০ মিলি. পর্যন্ত এন্টিভেনম প্রবেশ করানো যায়, তাহলে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।

মো. এমদাদুর রহমান উদয় : শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম