Logo
Logo
×

অল্পকথা

এনটিআরসিএ’র জটিল সমীকরণ

Icon

সেলিম আল রাজ

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অপরিপক্ব সিদ্ধান্তের ম্যারপ্যাঁচে ভুগছে হাজারও নিবন্ধনধারী। কর্তৃপক্ষের সিস্টেমগত নানা ত্রুটির কারণে দিন দিন সৃষ্টি হচ্ছে জটিলতা, বাড়ছে হতাশা। প্রায় সমান নম্বর নিয়ে কেউ চাকরি পাচ্ছে, আবার কেউ পাচ্ছে না; কোনো ব্যাচ আবেদনের সুযোগ পাচ্ছে, আবার কোনো ব্যাচ বঞ্চিত হচ্ছে। নিবন্ধিত সনদধারীর সংখ্যা বর্তমানে ৬ লক্ষাধিক। উল্লেখ্য, ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে ২০১৫ সাল থেকে দেশের বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে আসছে এনটিআরসিএ।

২০১৬ সালে ১ম গণবিজ্ঞপ্তিতে ১ম থেকে ১২তম পর্যন্ত সনদ পাওয়া সব পর্যায়ের নিবন্ধধারীরা আবেদনের সুযোগ পান। সেসময় নিজ উপজেলার প্রার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। সংশ্লিষ্ট উপজেলায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট জেলা, বিভাগ ও জাতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে বাছাই করা হয়। ২০১৮ সালে ২য় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৪০ হাজার শূন্যপদের বিপরীতে আবেদন চাওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ সেবার নিবন্ধধারীদের সারা দেশে আবেদনের সুযোগ প্রদান করে এবং পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে যত খুশি তত আবেদনের অদ্ভুত পদ্ধতি চালু করে। আবেদন প্রক্রিয়ার গোলকধাঁধায় পড়ে অনেক নিবন্ধনধারী একদিকে চাকরি পায়নি, অন্যদিকে যত খুশি আবেদন করতে গিয়ে চাকরিপ্রত্যাশী বেকার ছেলেমেয়েদের বহু টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে ৯৭ হাজার শূন্যপদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন চাওয়া হয়। উল্লেখ্য, এতে শুধু ১৬তম ও ১৭তম ব্যাচে উত্তীর্ণরা আবেদন করার সুযোগ পান, ১ম থেকে ১৫তম ব্যাচের নিবন্ধনধারীদের বঞ্চিত করা হয়। বলা বহুল্য, ১৭তম ব্যাচে নিবন্ধনধারীর সংখ্যা সাড়ে ২৩ হাজার এবং ১৬তম ব্যাচে উত্তীর্ণ সাড়ে ১৮ হাজারের বেশিরভাগ ইতোমধ্যে চতুর্থ বিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত ছিলেন। সেই হিসাবে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রায় ৯৭ হাজার শূন্যপদের মধ্যে ১৬তম ও ১৭তম ব্যাচ থেকে ৩০ হাজার চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করেন, যা বিজ্ঞপ্তির শূন্যপদের চেয়ে তিনগুণ কম। এর ফলে প্রায় ৭০ হাজার পদ ফাঁকাই থেকে যায়।

সময়ে সময়ে এনটিআরসিএ’র শর্তযুক্ত গণবিজ্ঞপ্তি শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিকে জটিল করে তুলেছে। কেউ কেউ ৪০ নম্বর পেয়ে চাকরি করছে, আবার কেউ অনেক বেশি নম্বর পেয়েও চাকরি পাচ্ছে না। পদ্ধতিগত পরিবর্তনের কারণে আগে নিবন্ধনধারী ও বর্তমান নিবন্ধনধারীর মধ্যে মূল্যায়নে ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। সম্মিলিত মেধাতালিকা করায় ১ম থেকে ১২তম ব্যাচের নিবন্ধনধারীদের সিংহভাগেরই মেধাক্রমের শেষদিকে অবস্থান। এর ওপর ৩য় ও ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ২০১৬ ও ২০১৮ সালে নিয়োগ পাওয়া ইনডেক্সধারীদের আবেদনের সুযোগ রাখা হয়। এতে দেখা যায় মেধাতালিকার শীর্ষে থাকা অধিকাংশ ইনডেক্সধারীই পুনরায় অন্যত্র চাকরি পান এবং তাদের আগের পদটি আবার শূন্য হয়ে যায়। এতে করে বারবার বঞ্চিত হচ্ছে মেধাতালিকায় তুলনামূলক একটু পেছনে থাকা নিবন্ধনধারীরা। এদিকে প্রথম থেকে পঞ্চদশ পর্যন্ত নিবন্ধনধারীদের শিক্ষক নিবন্ধন সনদের মেয়াদ শেষ বলে জানিয়েছে এনটিআরসিএ। কর্র্তৃপক্ষ নতুন নিয়ম করেছে-এখন থেকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ৩ বছর। অপ্রিয় হলেও সত্য, একজন পরীক্ষার্থীকে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করতে হলে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা নামক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হতে হয়, তারপর মেলে নিবন্ধন সনদ। সেই সনদের মেয়াদ ৩ বছর হলেই শেষ হয়ে যাবে, এটা হতে পারে না।

১ম থেকে ১৮তম ব্যাচ পর্যন্ত নতুন করে বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়ায় মেধাতালিকা প্রণয়ন করা দরকার। ইতোমধ্যে যারা চাকরি পেয়েছেন এবং যারা ৩৫ ঊর্ধ্ব, তাদের এই তালিকা থেকে বিরত রাখা হোক। অন্যান্য চাকরির মতো নির্ধারিত বিষয়ে একটি আবেদন আহ্বান করা হোক এবং নম্বরের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হোক। আগ্রহী নিবন্ধনধারীর সম্মতি থাকলে তাকে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ প্রদানের জন্য সুপারিশ করা হোক।

সেলিম আল রাজ : প্রভাষক, গৌরীপুর মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম