ইন্টারনেট পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে কবে?
শাওন মিরাজ
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বর্তমান যুগটা তথ্যপ্রযুক্তির। পুরো পৃথিবী হয়ে উঠেছে ইন্টারনেটনির্ভর। ইন্টারনেট পৃথিবীর মানুষকে একটা নেটওয়ার্কে যুক্ত করেছে। এর মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের খবর আমাদের কাছে চলে আসে খুব সহজেই। ইন্টারনেট ছাড়া এখন আমাদের জীবন প্রায় অচল।
পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এখন প্রায় ইন্টারনেটনির্ভর একটা দেশ। ব্যাংকের ডিজিটাল লেনদেন থেকে শুরু করে মোবাইল ব্যাংকিং, ট্রেনের টিকিট, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল প্রদান, পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ ইত্যাদি এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবমতে, দেশে প্রায় ১৬ কোটি গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে হঠাৎ করে দেশের ইন্টারনেটের সব ধরনের সেবা বন্ধ রাখা হয়, যা স্থায়ী হয় প্রায় পাঁচ দিন পর্যন্ত। গত ১৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে মোবাইল নেটওয়ার্কের দ্রুতগতির ফোর জি সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়, যার ফলে বুধবার থেকে মোবাইলে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কেউ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছিল না। এরপর ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় সারা দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৩ জুলাই রাতে পরীক্ষামূলক দেশের কিছু জায়গায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সচল করা হয়েছে। ২৮ জুলাই মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটও চালু করা হয়েছে। কিন্তু এখনো চলছে না ফেসবুক, হেয়াটসঅ্যাপসহ কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
দীর্ঘ পাঁচ দিন সারা দেশের মানুষ ইন্টারনেট পরিসেবার বাইরে ছিল। এর আগে বাংলাদেশে কখনো এত দীর্ঘ সময়ের জন্য সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়নি। দীর্ঘদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ফলে দেশের অর্থনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার ফলে সারা দেশের যোগাযোগ এক রকম বন্ধ হয়ে যায়। নানা রকম ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্যাস ও বিদ্যুতের মিটার রিচার্জ করার ক্ষেত্রে। ফলে বিদ্যুৎ অফিসে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। ইন্টারনেটের অভাবে মোবাইল ব্যাংকিং এক রকম বন্ধ হয়ে যায়। ইন্টারনেট না থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খবর পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অধিকাংশ প্রবাসীর সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রবাসে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তাদের কোনো খোঁজখবর নেওয়ার উপায় না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েন প্রবাসী এবং তাদের স্বজনরা। দেশের একটা বড় অংশ বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করে থাকে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে তারা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েন। তাদের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই তাদের অসম্পূর্ণ প্রোজেক্ট নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েন। এছাড়া অনলাইন পেমেন্ট, ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ সবই বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া বর্তমান সময়ে অনলাইনভিত্তিক অনেক ব্যবসা গড়ে উঠেছে, যেগুলোর একমাত্র মাধ্যম ইন্টারনেট। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের।
বর্তমানে পড়াশোনার অন্যতম সহায়ক ইন্টারনেট। গুগ্ল, চ্যাট জিপিটি ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সহয়তা করে। এছাড়া ইউটিউব ও অন্যান্য অনলাইন প্লাটফর্ম পড়াশোনায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ইন্টারনেট না থাকায় সব স্তরের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
পাঁচ দিন ইন্টারনেটবিহীন থাকার পর মানুষ নতুন করে উপলব্ধি করছে আমরা কতটা ইন্টারনেটনির্ভর। দৈনন্দিন কাজে আমাদের কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয়। সারা দেশের ইন্টারনেট সেবা দ্রুতই সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক হবে, এটাই চাওয়া সাধারণ মানুষের।
শাওন মিরাজ : শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ
shawanmiraj15@gmail.com
