|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মানবসেবায় জীবন উৎসর্গকারী, অসীম সাহসী, মহৎ মানুষদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে প্রতিবছর ১৯ আগস্ট পৃথিবীর বহু দেশে উদযাপিত হয় বিশ্ব মানবিক দিবস। বিশ্বব্যাপী মহামারি, যুদ্ধবিগ্রহ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো মানবিক সংকটে মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সহায়তা প্রদানকারীদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে এ দিবস পালন করা হয়। ২০০৩ সালের আজকের এ দিনে ইরাকের বাগদাদে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বোমা হামলায় নিহত ২২ জনের স্মরণে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৮ সালে এ দিবসটির প্রবর্তন করে। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা অন্যদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন, মূলত তাদের জন্যই এ দিবস।
মানবিকতা একটি মহৎ গুণ। মানবিকতা বলতে মানুষের প্রতি সহানুভূতি, দায়িত্বশীলতা আর সহমর্মিতা বোঝায়। মানবিক হৃদয়ের মানুষ সর্বদাই মানবতার সেবায় মগ্ন থাকেন, নিঃস্বার্থভাবে মানুষের মঙ্গল ও সুরক্ষার জন্য কাজ করেন। যুদ্ধবিগ্রহের সময় যুদ্ধবন্দি মানুষের খাদ্য, আশ্রয়, তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মহামারির সময় চিকিৎসার ব্যবস্থা করাই এ দিবসটির মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ডের অংশজুড়ে আছে সমাজের পীড়িত, অসহায়, দরিদ্র, দুর্বল ও মানবেতর জীবনযাপনকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের নিশ্চয়তা এবং সার্বিক সহায়তা প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও।
মানবিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সহানুভূতি এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধই বিশ্ব মানবিকতা দিবসের শিক্ষা। পাশাপাশি এ দিবসটি বিশ্বব্যাপী চলমান নানা সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবা প্রদান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় তাদের সার্বিক সহযোগিতার শিক্ষা দেয়। বিশ্ব মানবিকতা দিবস আমাদের মানবিক সহায়তার অপরিহার্যতা স্মরণ করিয়ে দেয়, মানুষের মানবতাবোধ জাগ্রত করে। বিশ্বের নানা প্রান্তের সংঘাত, দুর্যোগ, সংকটময় পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। মানবিকতার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। আমাদের উৎসাহিত করে সমতা, ন্যায়বিচার, শৃঙ্খলা এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও এর প্রসারের ব্যাপারেও।
বিভিন্ন জাতির মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব, কলহ অপসারণ করে সমাজে মানবিকতার ধারণাকে প্রসারিত করতে পালিত হয়ে আসছে এ দিবস। এর মাধ্যমে মূলত পৃথিবীবাসীকে মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে নিয়ে কাজ করতে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জোগানো হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সংহতি ও সহযোগিতার গুরুত্ব জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়। এ দিবস পালনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপিত হয়, যা পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক শান্তি ও পারস্পরিক সহনশীলতার উন্নয়নে রাখে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
সুন্দর, সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে বিশ্ব মানবিক দিবস আমাদের খুবই উজ্জীবিত করে এবং মানুষের মধ্যে মানবিকতা, ন্যায়বোধ, সহনশীলতা ও সহানুভূতির প্রকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। আমাদের মানবিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়। সামাজিক দায়িত্ব, সম্প্রীতি ও ঐক্য সৃষ্টি, সচেতনতা বৃদ্ধি, সুশিক্ষার প্রসারসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি মানবিক সমাজ বিনির্মাণে এ দিবস সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি একটি নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল পৃথিবী গড়তে রাখে অবদান।
হাসনা বেগম : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
