এমপক্স প্রাণঘাতী নয়
ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ও হালকা প্রকৃতির সংক্রমণ। এ রোগ সৃষ্টি হয় অর্থোপক্স ভাইরাসের মাধ্যমে, যার পূর্বনাম ‘মাঙ্কিপক্স ভাইরাস’। ১৯৫৮ সালে বানরের মধ্যে দেখা গিয়েছিল বলে এ নাম। ১৯৭০ সালে মানবদেহে প্রথম রোগটির সন্ধান পাওয়া যায়। মাঙ্কিপক্সের ক্ল্যাড-ওয়ান ভ্যারিয়েন্টে মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি, যা বর্তমানে ৩-৪ শতাংশ। সম্প্রতি এশিয়ার প্রথম দেশ হিসাবে এমপক্স সংক্রমিতের তালিকায় যুক্ত হয়েছে পাকিস্তান। এমপক্স নিয়ে বিশ্বব্যাপী ‘জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দেশে এখনো কোনো এমপক্স রোগী শনাক্ত না হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ সতর্কতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এমপক্স। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে এর বিস্তৃতি ঘটে কঙ্গো, উগান্ডা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা ও বুরুন্ডিতে। মাঙ্কিপক্স বা এমপক্সের সঙ্গে চিকেনপক্সের নামের মিল থাকলেও এ রোগ দুটি হয় দুটি ভিন্ন জাতের ভাইরাস সংক্রমণে। তবে দুটি রোগই অত্যন্ত ছোঁয়াচে। এ রোগের সঙ্গে মিল রয়েছে গুটিবসন্তের। দুটি ভাইরাসই অর্থোপক্সভাইরাস পরিবারে সদস্য। গুটিবসন্ত ছিল ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগ। পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ মারা যায় ওই রোগে। গণটিকার মাধ্যমে গুটিবসন্ত বিদায় নেয় ১৯৭৭ সালে।
এমপক্স ভাইরাস বায়ুবাহিত। প্রথমে এটি প্রাণী থেকে মানুষের দেহে স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়। সংক্রমিত ব্যক্তির নিবিড় সংস্পর্শ-যেমন: শারীরিক সম্পর্ক, ত্বকের স্পর্শ, এমনকি খুব কাছে থেকে কথোপকথন বা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে এমপক্স। শুরুতে জ্বর এবং পেশি ও গলায় ব্যথা থাকে। তারপর ধীরে ধীরে চুলকানি বা তীব্র ব্যথাসহ ফুসকুড়ি সাধারণত মুখ থেকে শুরু হয়ে পরে হাতের তালু এবং পায়ের তলদেশসহ শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; এর সঙ্গে মাথাব্যথা, লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ক্লান্তি যোগ হয়। অবশ্য সবার ক্ষেত্রে উপসর্গের এতটা বিস্তৃতি নাও থাকতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে ফুসকুড়িগুলোকে সাধারণ চিকেনপক্স মনে হতে পারে। কিন্তু লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া অন্যান্য পক্স থেকে এমপক্সকে আলাদা করে। অধিকাংশ লক্ষণ সংক্রমণের ৪ থেকে ১১ দিন পর দৃষ্টিগোচর হওয়া শুরু হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রথম দিনেই গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেওয়ার ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের প্রভাব ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করে। এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। মধ্য আফ্রিকা নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে মানুষের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা কম থাকায় রোগটিতে আক্রান্ত প্রতি ১০ জনের একজন মারা যায়। এ রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ কোনো ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি, তবে গুটিবসন্তের টিকা অনেকাংশে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এখনো বিশ্বব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচির সময় আসেনি। যারা ঝুঁকিতে আছেন বা ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন, শুধু তাদের এসব টিকা দেওয়া যেতে পারে।
এমপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ বা বিস্তার রোধে ঘরোয়াভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যেমন: মাস্ক পরিধান করা; ফুসকুড়ি আছে এমন লোকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলা; সংক্রমিত প্রাণী ও কারও ব্যবহৃত কিংবা তার সংস্পর্শে থাকা কাপড়, চাদর, কম্বল বা অন্যান্য উপকরণ থেকে দূরে থাকা; এমপক্স আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ ব্যক্তি থেকে আলাদা অবস্থানে রাখা; সংক্রমিত ব্যক্তি বা প্রাণীর সঙ্গে সংস্পর্শের পর সাবান ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া, বিশেষ করে খাওয়া বা মুখ স্পর্শ করার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে। সাবান ও পানি পাওয়া না গেলে বিকল্প হিসাবে অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান : মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
