দাম্পত্য জীবনে ইতিবাচক সম্পর্কের গুরুত্ব
ডা. নুসরাত জাহান দৃষ্টি
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রতিবছর ‘বিশ্ব যৌনস্বাস্থ্য সচেতনতা মাস’ হিসাবে সেপ্টেম্বরকে চিহ্নিত করা হয়। ৪ সেপ্টেম্বর দিনটি ‘বিশ্ব যৌনস্বাস্থ্য সচেতনতা দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়। এছাড়াও সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহটি ‘বিশ্ব যৌনস্বাস্থ্য সচেতনতা সপ্তাহ’ হিসাবে পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিবাদ্য হলো ‘ইতিবাচক সম্পর্ক’।
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ভালোবাসার পাশাপাশি আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ। নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক এবং সব বিষয়ে সম্মতি প্রয়োজন। কোনোভাবেই মানসিক দূরত্ব তৈরি করা যাবে না। কারণ, মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে শারীরিক স্বাস্থ্যের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, যা পরবর্তীকালে সুস্বাস্থ্য গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। দাম্পত্য জীবনে মানসিক ও শারীরিক সম্পর্কের ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমানে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের জন্য অনেকেই মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তবে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যৌনস্বাস্থ্য। ‘সেক্স’ শব্দটি আমাদের দেশে এখনো ট্যাবু হিসাবে পরিচিত। তাই এ বিষয়টি নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। এখনো অনেকেই এটাকে লজ্জাজনক বিষয় মনে করে থাকেন। অথচ, দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এটি খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। কেউ এর বাইরে নয়। এজন্য ‘যৌনস্বাস্থ্য’ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। তাই ‘সেক্স এডুকেশন’ প্রয়োজন। যৌনস্বাস্থ্য শিক্ষার মধ্যে বয়ঃসন্ধিকাল থেকে শুরু করে যৌবন, প্রজনন ও বার্ধক্যকালীন সব ধরনের যৌন সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে। তাই সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। তা না হলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে পারে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের যৌন রোগ সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পরিবার হলো যৌন শিক্ষার প্রথম নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের প্রত্যেকেরই সহায়ক ভূমিকা পালন করা উচিত। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর কিশোরীদের যৌনস্বাস্থ্য শিক্ষা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে। পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষিকা এ ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেন। যৌনস্বাস্থ্য শিক্ষা সম্পর্কিত যে কোনো তথ্যের জন্য এ সংক্রান্ত পরামর্শকের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর যৌন জীবন প্রতিটি দাম্পত্য জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক যৌনস্বাস্থ্য শিক্ষা একজন মানুষকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে বিরত রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, অকাল গর্ভপাত, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, যৌন রোগ ইত্যাদির সমাধান সম্ভব। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে আমরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকি। কিন্তু যৌনস্বাস্থ্যের বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় অনেকে এ ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকলেও চিকিৎসক কিংবা যৌনস্বাস্থ্য পরামর্শকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে সংকোচবোধ করেন। এমনটি হলে অনেক সময় সমস্যা কিন্তু সমস্যা হিসাবেই থেকে যায়। অথচ সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে কিছুটা সচেতনতাই পারে দাম্পত্য জীবনে নিরাপদ যৌনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে। প্রত্যেককে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যেমন মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, তেমনি যৌনস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। প্রত্যেকের জীবন হোক নিরাপদ, সুন্দর ও আনন্দময়।
ডা. নুসরাত জাহান দৃষ্টি : চিকিৎসক
