নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক ব্যবসা
মনিরা আক্তার
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ছাত্রজীবনে পড়েছিলাম সোভিয়েত ইউনিয়নের অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব নিয়ে মার্কিন লেখক ও সাংবাদিক জন রিডের লেখা ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন’। ওই বিপ্লবে শ্রমিক ও সৈনিকদের নেতৃত্বে বলশেভিকরা রাশিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সোভিয়েতের হাতে তুলে দেয়। সেখানেও আন্দোলনের শুরু হয়েছিল দেশটির তখনকার রাজধানী পেত্রগাদে, যা ছিল অভ্যুত্থানের কেন্দ্র। সে সময় রাশিয়াজুড়ে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। গত জুলাইয়ে ঢাকার শাহবাগ থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আগস্টের ৫ তারিখ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে।
বিগত হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে রয়েছে পাহাড়সম অভিযোগ। বিগত সরকারের শাসনামলে দেশে মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠে। প্রতিদিন পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের খবরে সরকারের প্রতি মানুষের চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হতে থাকে। ফলে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিতে দেরি হয়নি। অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া এই বিজয় এখন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এ দুই আন্দোলনের মধ্যে তাই অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও এদেশের পোড় খাওয়া জনগণ ইতিহাসের অনেক আন্দোলনেরই সাক্ষী। যেমন ’৪৭-এর দেশভাগ, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ, ’৯০-এর এরশাদবিরোধী আন্দোলন এবং সর্বশেষ ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান। অন্তর্বর্র্তী সরকারের কাছে মানুষের যেমন প্রত্যাশা রয়েছে, তেমনি দেশকে নিয়ে আছে শঙ্কাও। যদি তৃতীয় কোনো শক্তি আবার দেশটাকে অস্থিতিশীল করে তোলে! বাঙালির ইতিহাসটাই তো নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামের। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও অর্থনৈতিক স্থিতি আসেনি। অর্থনৈতিক বৈষম্য ও শোষণের কারণে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। দেশের সাধারণ মানুষ ঠিকই তার সাধ্যমতো শ্রম দিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে; কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরছে না। অথচ একশ্রেণির সুবিধাভোগী সাধারণ মানুষের অর্থ লোপাট করে ফুলে-ফেঁপে উঠছে। নতুন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা তাই আকাশচুম্বী।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও শিল্পবিপ্লবের ছোঁয়া দেশের মানুষকে নতুন স্বপ্নের দিকে নিয়ে গেছে। যেখানে কৃষির পাশাপাশি শিল্প খাতের উন্নয়ন দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করেছে। শিল্প খাতের অর্থনীতির এই অংশে নারীর ভূমিকা অগ্রগণ্য। কারণ দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীর অবস্থান এখনো অনেক পিছিয়ে। ব্যবসার ক্ষেত্রে নারীর প্রথম প্রতিবন্ধকতা হলো পুঁজি, এর সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা তো আছেই। ব্যবসা পরিচালনার জন্য নারীর যে সুযোগ-সুবিধা আছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। অনেক সুযোগ-সুবিধা শুধু কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে ব্যবসা পরিচালনা করতে এসে নারীরা এর কিছুই পায় না। এমন প্রেক্ষাপটে উইমেন চেম্বারগুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে নারী ব্যবসায়ীদের এগিয়ে নেওয়া এখন সময়ের দাবি। উইমেন চেম্বারগুলোর মাধ্যমে সমাজে নারীর ভূমিকা আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে বলে বিশ্বাস।
মনিরা আক্তার : সভাপতি, চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি
