অনলাইন জুয়া থেকে সাবধান
মো. মুজাহিদুল ইসলাম
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব; আবিষ্কার হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি। কিন্তু প্রযুক্তি সবসময়ই যে ভালো কিছু বয়ে আনে না, তার উদাহরণ বাংলাদেশের অনলাইন জুয়া। তরুণদের মধ্যে বর্তমানে অনলাইন জুয়ায় আসক্তি ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক তরুণ কৌতূহলবশত আসক্ত হচ্ছে বিভিন্ন অনলাইন জুয়া সাইটে। আর এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের একটি বৃহৎ অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে টার্গেট করে বিভিন্ন জুয়াভিত্তিক সাইট প্রতিনিয়ত তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করে যাচ্ছে। এর ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সময় অপ্রত্যাশিতভাবে জুয়ার বিজ্ঞাপন সামনে চলে আসছে এবং সেই বিজ্ঞাপন দেখার ফলে তরুণদের মাঝে সৃষ্টি হয় কৌতূহল। তাছাড়া জুয়ার বিজ্ঞাপনে অভিনয় করতে দেখা যায় বিভিন্ন কনটেন্ট ক্রিয়েটরসহ জনপ্রিয় ব্যক্তিদের। তাদের বিজ্ঞাপনে অভিনয় দেখে বিশ্বাস করে অনেক তরুণ যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন জুয়া সাইটে। কৌতূহলের একপর্যায়ে তরুণরা আসক্ত হচ্ছে বিভিন্ন জুয়া সাইটে। আর একবার জুয়া সাইটে আসক্ত হয়ে পড়লে পরে আর চাইলেও তা থেকে বের হতে পারছে না।
অনলাইন জুয়া সাইটে টাকা লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত হয় বাংলাদেশি বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ফলে জুয়া সাইটে টাকা বিনিয়োগ ও উত্তোলন অনেক সহজ। খুব সহজেই লেনদেন সম্পন্ন করা যায়। অনলাইন জুয়ায় বিভিন্ন গেমস, ক্রিকেট বিশ্বকাপ, ফুটবল বিশ্বকাপসহ নানা বড় ইভেন্ট সামনে এলে জুয়ার কারবার জমজমাট হয়ে ওঠে। এসব জুয়া সাইটে টাকা বিনিয়োগ করে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছে দেশের লাখো তরুণ।
অন্যদিকে জুয়ায় বিনিয়োগ থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে। ফলে একদিকে যেমন সর্বস্বান্ত হচ্ছে তরুণসমাজ, তেমনি অন্যদিকে টাকা বিদেশে পাচার হওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জুয়ার প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করায় দেখা দিচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক কলহ। জুয়ার প্রভাব পড়ছে তরুণদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও। জুয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে অনেক তরুণের মধ্যে দেখা দিচ্ছে মাদকাসক্তির প্রবণতা, যা তাদের লেখাপড়া থেকে দূরে রাখছে, নষ্ট করছে ভবিষ্যৎ জীবন।
বিশেষজ্ঞরা অনলাইন জুয়া সাইটে তরুণদের আসক্তি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জুয়ার অ্যাপ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সংশ্লিষ্টরা কাজ করলেও তাদের মতে, অনলাইনে সাইট ব্লক করা সম্ভব হলেও জুয়ার অ্যাপ বন্ধ করা যায় না। গুগল প্লে বা অ্যাপল স্টোর থেকে মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে জুয়া খেলা যায়। তাছাড়া প্রযুক্তিগত নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অ্যাপ ব্লক বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ফলে অনলাইনকে পুরোপুরি জুয়ামুক্ত করা যাচ্ছে না। এছাড়া প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নামে জুয়ার সাইটের আবির্ভাব ঘটছে অনলাইন জুয়ার জগতে।
জুয়ার এই আগ্রাসন থেকে তরুণসমাজকে বাঁচাতে প্রয়োজন সর্বস্তরে সচেতনতা। পাশাপাশি জুয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে সর্বসাধারণের মধ্যে চালাতে হবে ব্যাপক প্রচারণা।
মো. মুজাহিদুল ইসলাম : শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ
