যানজট নিরসনে দৃষ্টি দিন
উম্মে বুশরা মাহাদিয়া
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানী ঢাকাসহ মেগাসিটিগুলোর একটি বড় সমস্যা যানজট। যানজটে জনজীবন স্থবির হয়ে থাকে। তবুও এ সমস্যাটি যেন উপেক্ষিত হয়ে আছে। সময়ের মূল্য অপরিসীম। অমূল্য সময়কে কাজে লাগাতে না পারার আক্ষেপ হয়তো রাজধানীবাসীকে কুরে কুরে খায়। হাসপাতালে দেরিতে পৌঁছানোর কারণে মৃত্যু হয় রোগীর। তবু এদিকে যেন কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ ভবিষ্যতে রাজধানীর ওপর চাপ আরও বাড়বে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২৩ থেকে ২৫ কোটিতে পৌঁছাবে এবং এ জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি বড় অংশ ঘটবে শহরাঞ্চলে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে যানজট। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, রাজধানীতে যানজটের কারণে দিনে প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, অর্থমূল্যে যার পরিমাণ প্রায় ১৩৯ কোটি টাকার সমান। এ হিসাবে বছরে যানজটের ক্ষতি ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
৫০ লাখ মানুষের বসবাস উপযোগী রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে বসবাস করছে প্রায় দুই কোটি মানুষ। এই বাড়তি জনসংখ্যা ও বিপুলসংখ্যক যানবাহন যানজটের অন্যতম কারণ। একটি মেগাসিটির আয়তনের তুলনায় ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকা দরকার; কিন্তু ঢাকায় আছে ১০ শতাংশেরও কম। তার ওপর ফুটপাত দখল, রাস্তা মেরামতে সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনাহীন স্থাপনা, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, চালকদের অসচেতনতা, ট্রাফিক আইন না মেনে চলা যানজটের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসাবে বিবেচিত। জনগণের আইন না মানার প্রবণতা, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব সচেতনতার অভাব, ঘুস গ্রহণ, অবৈধ লাইসেন্স গ্রহণের মতো কাজগুলো প্রতিনিয়ত যানজট বাড়িয়েই চলেছে। যানজটে পড়া মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক রোগ দেখা দেয়। ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যানজটের কারণে টেনশন বাড়ে, রক্তচাপ বাড়ে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায় তিনগুণ। অতিরিক্ত কালো ধোঁয়া পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যানজট নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। যেমন-ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, রাস্তার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বাইপাস নির্মাণ, যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা আনা এবং পাতাল রেলের ব্যবস্থা করা। প্রধান সড়কে রিকশা ও ব্যাটারি রিকশা চলাচল বন্ধ করতে হবে। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু রাজধানীবাসীর দুঃখ ঘোচে না! স্বৈরাচারী সরকারকেও হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে হটানো গেছে। এখন প্রত্যাশা বহুগুণ বেড়ে গেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কাছে। এ সময় যানজটের মতো জ্বলন্ত সমস্যাটিতে গুরুত্ব না দিলে এবং সমস্যাটির দ্রুত সমাধান করা না গেলে মানুষের জীবনে স্বস্তি আসবে না।
উম্মে বুশরা মাহাদিয়া : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
mahadiaummebusra@gmail.com
