Logo
Logo
×

অল্পকথা

ওদের একটু উষ্ণতা দিন

Icon

মো. সবুজ মিয়া

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রকৃতিতে এসেছে শীতকাল। দেশের উত্তর জনপদে পড়েছে তীব্র শীত। এ সময় ভোরবেলা চারদিক ঘন কুয়াশায় ছেয়ে যায়। দূরের বস্তু দেখা যায় না। কাজকর্মেও স্থবিরতা চলে আসে। সারাদিন ঘরে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকার মজাই আলাদা। কিন্তু এই সুখ সবার কপালে জোটে না। বিশেষত অসহায় ছিন্নমূল মানুষের, যাদের কাছে শীত মানেই সীমাহীন দুর্ভোগ। শীত মানেই আতঙ্ক। বছরের বাকি মাসগুলো কোনোরকমে সুখে-দুঃখে কাটলেও বিপত্তি বাধে শীতে। কনকনে হাড় কাঁপানো শীতে যেখানে গরম কাপড় পরেও বাইরে বের হওয়া কঠিন, সেখানে অনেক দরিদ্র মানুষের ভাগ্যে একটিও শীতের বস্ত্র জোটে না। একটু উষ্ণতা খুঁজে বেড়ায় তারা।

সূদুর সাইবেরিয়া থেকে একটু উষ্ণতার আশায় পাখিরা হাজার মাইল দূরের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে পাড়ি জমায়। অথচ একটুকরো ছেঁড়া কাপড় পরে কাটিয়ে দিতে হয় অসহায় ছিন্নমূল মানুষদের। কখনোবা তাও ঠিকমতো জোটে না। সবচেয়ে কষ্ট ভোগ করতে হয় শহরের বস্তি, স্টেশন, মার্কেট, ফুটপাত কিংবা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো মানুষদের। রাতে শহরে বের হলেই এমন মানুষদের অহরহ চোখে পড়ে। ফুটপাত, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, মার্কেট কিংবা গাছের নিচে চাদর, ছেঁড়া কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে আছে একদল মানুষ। শরীরগুলো কনকনে হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে। বস্তির ছোট খুপরি ঘরে শীতে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে কতগুলো বিবর্ণ চেহারার মানুষ। গ্রামেও এমন দৃশ্য নেহাত কম নয়।

কিন্তু তাদের কষ্ট দেখার মতো কেউ নেই। রাষ্ট্র বড় বড় উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণে যতটা মনোযোগী, ঠিক ততটাই অমনোযোগী এসব ছিন্নমূল মানুষের প্রতি। মাঝেমধ্যে দু-একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও, বিত্তবান ব্যক্তি ছিন্নমূল মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা না পাওয়া, সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ইত্যাদি কারণে এর যথাযথ সুফল পাওয়া যায় না। অনেক সময় দেখা যায় একই জায়গার ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। অন্য জায়গায় কেউ মুখ তুলেও তাকায়নি। ফলে একই ব্যক্তি দুবার সহায়তার আওতায় এলেও অপর ব্যক্তি একবারও পায়নি। এ জন্য প্রয়োজন সংগঠনগুলোর মধ্যে যথাযথ সমন্বয়সাধন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সদস্যদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু শহরে কার্যক্রম সীমাবদ্ধ না রেখে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও তা ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদেরও অসহায় ছিন্নমূল মানুষদের সহায়তায় মানবতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রত্যেককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারি পর্যায়েও উদ্যোগ নিতে হবে। জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশকে বাদ দিয়ে কখনো পরিপূর্ণ উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকারি পর্যায়ে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে আবাসন ও পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার চাইলে এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিওগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারে। এতে শীতে অসহায় ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে।

মো. সবুজ মিয়া : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম