|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পৃথিবীর ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর একটি দাবানল, যদিও তা আমাদের দেশে বিরল। কোনো কিছু দ্রুত ছড়িয়ে পড়া বোঝাতে আমরা ‘দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়া’ কথাটা ব্যবহার করি। দাবানল হলো বনভূমি বা পাহাড়ি অঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে সংঘটিত অনিয়ন্ত্রিত অগ্নিকাণ্ড। দাবানল ঘটলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে আগুন জ্বলতে ও ছড়াতে থাকে। এই আগুন সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। মূলত উত্তপ্ত আবহাওয়াসম্পন্ন অঞ্চলের বনভূমি বা ঝোপঝাড়সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে দাবানল ঘটার আশঙ্কা বেশি থাকে। শুষ্ক আবহাওয়া, তুলনামূলক কম আর্দ্রতা, খরা এবং অজস্র দাহ্য গাছের শুষ্ক কাঠ ও পাতার উপস্থিতি দাবানল তৈরির জন্য সবচেয়ে আদর্শ পরিবেশ। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় এ রকম বনভূমি এবং ঝোপঝাড়সমৃদ্ধ অঞ্চল বেশি দেখা যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই এসব দেশেই দাবানলের প্রকোপ বেশি। প্রশ্ন জাগতে পারে, বনাঞ্চলের এ রকম দাহ্য পরিবেশে আগুনটা কীভাবে শুরু হয়? প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট, দুভাবেই আগুনের সূত্রপাত ঘটতে পারে। মানুষের ভুলে দাহ্য ও শুষ্ক পরিবেশে আগুনের সৃষ্টি হলে সেটাকে শুরুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। তা না হলে দাবানল শুরু হতে পারে। সাধারণত ক্যাম্প ফায়ারের আগুন, সিগারেট বা পিকনিকের রান্নার চুলার আগুন থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটতে পারে। পরবর্তী সময়ে বাতাসের তীব্র প্রবাহ আগুনকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক যেসব কারণে দাবানল হয়, তার ভেতর অন্যতম হলো বজ্রপাত। অজস্র দাহ্য গাছের শুষ্ক কাঠ ও পাতা রয়েছে এমন কোথাও যদি বজ্রপাত হয়, তাহলে এর ফলে ওই জায়গায় আগুন ধরে যায়। এরপর বাতাস সেটিকে ছড়িয়ে দিতে পারে আরও বিশাল এলাকাজুড়ে। দাবানল সৃষ্টির প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত। আগ্নেয়গিরি থেকে উদগিরিত লাভা বা ছাই ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের ব্যাপক জায়গাজুড়ে। পাহাড়ি বনভূমি বা শুষ্ক ঝোপঝাড়ে ছাই বা লাভা উড়ে গিয়ে আগুনের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। সেখান থেকে পরবর্তী সময়ে বাতাস প্রবাহ এবং দাহ্য উপাদানের উপস্থিতি আগুনটিকে একটি দাবানলে রূপ দেয়। প্রতি ক্ষেত্রেই দাবানল সৃষ্টির জন্য দাহ্য উপাদানের ব্যাপক উপস্থিতি এবং প্রবহমান বাতাসের বড় ভূমিকা থাকে। দাবানল একবার বড় এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে সহজে নেভানো যায় না। এক ভয়ংকর সর্বগ্রাসী রূপ নিয়ে এটি অগ্রসর হতে থাকে। পথিমধ্যে যা কিছু থাকে, সবকিছুই আগুনের লেলিহান শিখায় ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষ এবং মূল্যবান সম্পদ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া ছাড়া রক্ষা পাওয়ার উপায় থাকে না। দাবানলের ফলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক এবং জানমালের ক্ষতি হলেও এর কিছু পরিবেশগত উপকারিতাও রয়েছে। ইকোসিস্টেম নতুন করে শুরু হওয়ার সুযোগ আসে দাবানলে সব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর। ছাই থেকে নতুন করে তৃণ উদ্ভিদের জন্ম হয় এবং ধীরে ধীরে বনভূমি পুনর্জন্ম লাভ করে। মাটির পুষ্টিগুণ ও উর্বরতা ফিরে আসে। উঁচু গাছের ছায়ায় যেসব মাটিতে সূর্যের আলো পৌঁছাত না, সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় এবং নতুন করে প্রাণের সঞ্চার ঘটে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাম্প্রতিককালে অন্যসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতোই বিশ্বজুড়ে দাবানলের ব্যাপকতা লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে কখনো প্রাকৃতিক কারণে দাবানল হয়েছে বলে জানা যায় না।
মো. আজিজুল ইসলাম : প্রাবন্ধিক
