বসন্তের কোকিল
আ ন ম আমিনুর রহমান
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ডিপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে রিকশা চেপে দ্রুত গ্র্যাজুয়েট ফ্যাকাল্টির দিকে যাচ্ছি। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মিষ্টি সুরের ‘কু-কুউ-কুউ-কুউউ-কুউউ-কুহু-কুহু-’ কুজনে পাশের বাগানের দিকে চোখ ফেরালাম। তখনই পেঁপে গাছে লাল চোখের কুচকুচে কালো পাখিটা চোখে পড়ল। পরীক্ষার ব্যস্ততায় মনেই ছিল না যে ফাল্গুন এসে গেছে। পাখিটির কুজন বসন্তের বার্তা নিয়ে এলো। মনটা আনন্দে ভরে উঠল।
কুহু কুহু ডাকা লাল চোখের কালো পাখিটি আমাদের অতি পরিচিত কোকিল। কুলি বা এশীয় কোকিল নামেও পরিচিত। কক্সবাজারের দরিয়ানগরের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতারা একে কাকসায়ের নামে ডাকে। এ নামে ডাকার কারণ জিজ্ঞেস করতেই এক বৃদ্ধ বললেন, ‘ওরা দেখতে কাকের মতো কালো আর গান গায় সুন্দর। অদ্ভুত যুক্তি! কোকিলের ইংরেজি নাম Asian/Western KoelevAsian Cuckoo। Cuculidae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Eudynamys scolopacea.
ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত কোকিলের দৈর্ঘ্য ৪০ থেকে ৪৩ সেন্টিমিটার। ওজন ১৭০ গ্রাম। পুরুষের দেহের পালক কুচকুচে কালো ও তাতে সবুজ আভা রয়েছে। অন্যদিকে, স্ত্রীর বাদামি দেহে অসংখ্য সাদা ছিট ও রেখা আঁকা। পুরুষের ঠোঁট চকচকে সবুজ হলেও স্ত্রীর হালকা ধূসর। চোখ টকটকে লাল। পা, পায়ের পাতা ও নখ কালো। অপ্রপাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে মায়ের মতো।
কোকিল বহুল দৃশ্যমান আবাসিক পাখি। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই দেখা যায়। মূলত একাকী থাকতে পছন্দ করে। প্রজননকাল ছাড়া সচরাচর জোড়ায় দেখা যায় না। ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের পাকা ফল এদের প্রিয়। গাছের ছায়ার পাতার আড়ালে থাকতেই ভালোবাসে। পুরুষ কোকিল গলায় মধুর সুর তুললেও স্ত্রী কোকিল নীরব থাকে।
মার্চ-আগস্ট কোকিলের প্রজনন মৌসুম। এসময় পুরুষ স্ত্রীকে গলায় সুর তুলে আকৃষ্ট করে ও মিলিত হয়। এরা কিন্তু বাসাও বানায় না, ডিমেও তা দেয় না। ডিম পাড়ার সময় লুকিয়ে কাক, হাঁড়িচাঁচা বা শালিকের বাসায় ডিম পাড়ে। ধাত্রী পাখির ডিমের সঙ্গে মিল রেখে ডিম পাড়ার অদ্ভুত ক্ষমতা বিধাতা এদের দিয়েছেন। বংশধর নিশ্চিত করতে একটি বাসায় ডিম না পেড়ে কয়েকটি বাসায় ডিম পাড়ে। বিভিন্ন বাসায় ডিমের সংখ্যা ৪ থেকে ৬টি। না বুঝে কাক ও অন্য পাখি এদের ডিমে তা দেয়। ডিম ফোটে ১২ থেকে ১৩ দিনে। ছানা ১৮ থেকে ২০ দিনে বড় হয়ে উড়তে শেখে। আয়ুষ্কাল চার বছরের বেশি।
লেখক : বন্যপ্রাণী জীববিজ্ঞানী ও প্রাণিচিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, বন্যপ্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্র, বশেমুরকৃবি, সালনা, গাজীপুর
