Logo
Logo
×

খবর

উল্লাপাড়ায় মাইক্রোবাসকে ট্রেনের ধাক্কা

সুমাইয়া-রাজনের বাড়িতে শোকের মাতম

Icon

উল্লাপাড়া ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সুমাইয়া-রাজনের বাড়িতে শোকের মাতম

বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাত্র আড়াই ঘণ্টা পর নিভে গেল বর-কনের জীবনপ্রদীপ। সোমবার সন্ধ্যায় উল্লাপাড়ার সলপ রেল স্টেশনের অর্ধ কিলোমিটার উত্তরে অরক্ষিত একটি লেভেল ক্রসিংয়ে তাদের বহনকারী মাইক্রেবাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

একটি ট্রেন মাক্রোবাসটি ধাক্কা দিয়ে এক মিলোমিটার দূরে ঠেলে নিয়ে যায়। এতে বর রাজন ও কনে সুমাইয়সহ ১১ জন নিহত হন। এ ঘটনার পর রাজন-সুমাইয়াসহ নিহত অন্যদের পরিবারে শোকের মাতম চলছে।

মঙ্গলবার সকালে সুমাইয়া ও তার ভাবি মমতা খাতুনের লাশ উল্লাপাড়ার এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রামে পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন সুমাইয়ার মা-ভাই-বোনসহ স্বজনরা।

এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তারা। লাশ একনজর দেখতে এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন সুমাইয়ার বাড়িতে ভিড় করেন।

সুমাইয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়িতে সোমবারের বিবাহের সাজসজ্জা আগের মতোই আছে। গেট, খাবারের টেবিল চেয়ার, বর-কনের আসন পড়ে আছে। আর বর-কনের আসনের পাশে পরে আছে সুমাইয়ার লাশ। গ্রামের কয়েকজন মহিলা সুমাইয়ার ভাবিকে শেষ গোসল করাচ্ছেন।

কনে সুমাইয়ার ভাই ও নিহত মমতার স্বামী শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে তার একমাত্র ১০ বছরের সন্তানকে নিয়ে পাশে নির্বাক বসে আছেন। জিজ্ঞাস করতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এ শোক মেনে নেয়ার মতো না। দুর্ঘটনায় সদ্য বিবাহিত বোন ও স্ত্রীকে হারিয়ে এখন বাঁচার আশাই শেষ হয়ে গেছে।

সুমাইয়ার বিধবা মা হাফিজা খাতুন মেয়ের লাশের পাশে বসে ফুফিয়ে কাঁদছিলেন। মাঝে মাঝেই চিৎকার করে বলছিলেন, কত দুর্ভাগা আমার মেয়ে। বিয়ের দিনই লাশ হয়ে ফিরল মেয়ে আমার। যে লাল বেনারশি শাড়ি পড়ে সুমাইয়া তার সদ্য শ্বশুর বাড়ি রওনা হয়েছিল সেই শাড়ি পড়েই লাশ হয়ে ফিরল বাপের বাড়ি। মমতার বড় বোন আইমালা খাতুন ও রোকেয়া খাতুন বোনের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গেছে। রোকেয়া বলেন, অরক্ষিত রেলক্রসিং আমাদের সব স্বপ্ন শেষ করে দিল।

এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রামসহ আশপাশের গ্রাম থেকে শত শত নারী-পুরুষ এসে ভিড় করছে সুমাইয়ার বাড়িতে। অনেকেই স্বজন হারানোদের সান্ত্বনা দিচ্ছে কিন্তু কোনো সান্ত্বনাই তাদের আহাজারিকে থামাতে পারছে না। সকাল সাড়ে ১০টার জানাজা শেষে সুমাইয়া ও তার ভাবি মমতাকে গুচ্ছগ্রাম কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়াকান্দাপাড়া গ্রামে বর রাজন আহমেদের বাড়িতেও শোকের মাতম চলছে। রাজনকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এই ঘটনায় পাকশী বিভাগ রেলওয়ে দফতর ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিভাগীয় রেলওয়ে পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। অপরদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জেলার এডিসি জেনারেল মো. ফিরোজ মাহমুদকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যবিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ট্রেনের ধাক্কা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম