Logo
Logo
×

খবর

শিমরাইল মোড়ে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

ইউটার্ন না থাকায় ঘুরতে হয় তিন কিলোমিটার

উন্নয়ন প্রকল্প উপকারের বদলে দুর্ভোগের কারণ

Icon

হোসেন চিশতী সিপলু, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক। পূর্বাঞ্চলীয় ১৮টি জেলার সঙ্গে ঢাকার ‘গেটওয়ে’ খ্যাত এ মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়। এই অংশটুকু দিয়ে প্রতিদিন হাজারো যাত্রীবাহী বাসসহ সব ধরনের যান চলাচল করছে। এক বছরে এখানে ২৩ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু এ উন্নয়ন কাজ জনগণের উপকারের বদলে যাত্রী ও এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এই প্রকল্পের অধীন ৮ লেনের এ মহাসড়ককে গলিপথের মতো করে ২ কোটি ৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে ‘ডেডিকেটেড লেন’। যা এলাকাবাসী ছাড়াও দূরপাল্লার ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জমুখী যাত্রীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা ২০২২ সালের জুনে শিমরাইল মোড়ের পশ্চিমে হাজী ইব্রাহিম খলিল শপিং কমপ্লেক্স ও প্রিয়ম নিবাসের সামনের ইউটার্নটি বন্ধ করে দেওয়ায় প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে নারায়ণগঞ্জ থেকে ডেমরা কিংবা চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী যানবাহনকে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। তবে মানুষ ও যানবাহন চালকদের দুর্ভোগের ব্যাপারটি নারায়ণগঞ্জ সওজ কর্তৃপক্ষ মানতে নারাজ। যদিও বা নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেছেন, দুর্ভোগ কমাতে ১০ লেন এবং ইউটার্ন বা টানেল বানাতে স্টাডি চলছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদানীনগরের ১০ তলা এলাকা থেকে কাঁচপুর ব্রিজের পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এই ২ কিলোমিটার অংশ সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর অন্যতম দুর্ভোগের কারণ। শিমরাইলে দুটি পদচারী সেতু থাকলেও তা ভিক্ষুক ও হকারদের দখলে। এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে হাজী ইব্রাহীম খলিল শপিং কমপ্লেক্স অ্যান্ড প্রিয়ম নিবাস অথবা শিমরাইল চৌরাস্তায় কিংবা সওজ অফিসের সামনে একটি ইউটার্ন (মৌচাকে নির্মিত ইউটার্নের আদলে) নির্মাণ করা জরুরি বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর পূর্বপ্রান্ত থেকে ঢাকামুখী সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদীর মাদানীনগর ১০ তলা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এবং মাদানীনগর থেকে কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের প্রায় ৫ ফুট উঁচু ২টি পৃথক ডেডিকেটেড লেন করা হয়েছে। পাশে উভয়দিকেই সার্ভিস লেন আছে। মহাসড়কের এই পুরো অংশে সার্ভিস লেনের ‘চওড়া’ ঠিক থাকলেও মাদানীনগর পদচারী সেতুর পশ্চিমাংশ অপেক্ষাকৃত সরু। তাছাড়া পদচারী সেতুর পার্শ্বেই নাসিক ১নং ওয়ার্ডের ফেলা বর্র্জ্য স্তূপাকারে রাখা হয়। এ কারণে ঢাকামুখী যানবাহনকে সার্ভিস লেন থেকে বের হতে এবং মাদানীনগর পদচারী সেতু এলাকা দিয়ে চট্টগ্রামমুখী যানবাহনকে সার্ভিস লেনে প্রবেশ করতে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। বাসচালকরা জানান, ঢাকামুখী যানবাহন এ স্থানে আটকে যাওয়ার ভয়ে সার্ভিস লেনে প্রবেশ করছে না। বাধ্য হয়েই তারা ডেডিকেটেড বা হাইওয়ে লেনে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে।

আরও জানা যায়, পূর্বাঞ্চলীয় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৮টি জেলার যাত্রীরা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস থেকে নারায়ণগঞ্জ কিংবা ডেমরায় বসবাতরত যাত্রীদের শিমরাইল মোড় বাসস্ট্যান্ডে নামানোর কথা। কিন্তু যাত্রীর ডেডিকেটেড লেনের প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু ডিভাইডার থাকায় তারা এখন শিমরাইল মোড় বাসস্ট্যান্ডে নামতে পারছেন না। পরিবহণ চালকরা এসব যাত্রীকে শিমরাইল মোড় থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পাইনাদী কুয়েত প্লাজার ১০ তলার সামনে অথবা কাঁচপুর সেতুর পূর্বপ্রান্তে নামিয়ে দিচ্ছে। উভয়দিক থেকেই যাত্রীরা ব্যাগসহ মালামাল নিয়ে হেঁটে কিংবা বিকল্প ব্যবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রচণ্ড কষ্ট শিকার করে শিমরাইল মোড়ে এসে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। আবার পরিবহণ চালক-হেলপাররা যেসব যাত্রী শিমরাইল মোড়ে নামিয়ে দিচ্ছেন, সেসব যাত্রী ডিভাইডার টপকে পার হতে গিয়ে পড়ছেন বিড়ম্বনায়। এদিকে শিমরাইল মোড়ে পরপর ২টি পদচারী সেতু থাকলেও সেতু ২টি হকার ও ভিক্ষুকদের দখলে থাকায় সমস্যায় পড়ছেন সেতু ব্যবহারকারীরা। আবার পদচারী সেতু উঁচু হওয়ায় সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হার্টের রোগীসহ অসুস্থ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের অনেক কষ্ট হয়। তবে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেছেন, পদচারী সেতু ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ কমাতে আগামী অর্থবছরে এ সেতুতে র‌্যাম্প বসানো হবে।

স্থানীয়রা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে গড়ে উঠেছে আদমজী ইপিজেড। এছাড়াও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সাইলো (খাদ্যগুদাম), গোদনাইলের পদ্মা ও এসও মেঘনা নামে দুটি জ্বালানি তেলের ডিপো। ডিপো ২টি থেকে প্রতিদিন শত শত ট্যাংকলরি জ্বালানি তেল নিয়ে ডেমরা সড়ক হয়ে অথবা চট্টগ্রাম ও সিলেট অভিমুখে ছুটে চলে। তাছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জে রয়েছে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। শিমমরাইল মোড়ের উভয় পাশে রয়েছে অসংখ্য মার্কেট। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি, পাইনাদী, কদমতলী, গোদনাইলসহ আশপাশের এলাকাবাসীর অনেকের কেনাকাটাসহ ব্যবসা-চাকরি শিমরাইলকেন্দ্রিক। এসব এলাকা থেকে যানবাহনে করে ডেমরা কিংবা চট্টগ্রাম অথবা সিলেটমুখী যেতে হলে প্রায় ৩ কিলোমিটার ঘুরে সানারপাড়ের ইউটার্ন দিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে যানবাহনের খরচ বাড়ছে, সময়ও অপচয় হচ্ছে। এছাড়াও আদমজী রয়েছে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। ডেমরা, কাঁচপুর ব্রিজের পূর্বের কোন এলাকা, শিমরাইল, সানারপাড় ও নয়াআটিসহ আশপাশের এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে ফায়ার সার্ভিসকে ৩ কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। অনেক সময় এ ফায়ার সার্ভিসকে সার্ভিস লাইন দিয়ে যাওয়ার সময় যানজটের কবলে পড়ে থাকতে হয়। যদি শিমরাইলের আগের স্থানে কিংবা শিমরাইল চৌরাস্তায় অথবা সওজ এলাকায় মৌচাক বাসস্ট্যান্ডের ইউটার্নের আদলে একটি ইউটার্ন কিংবা ইউলুপ নির্মাণ করা হয় তবে অনেকের জন্য চলাচল সহজ হবে। তাই দুর্ভোগ কমাতে শিমরাইল এলাকায় একটি ইউটার্ন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম