পিস্তল কেড়ে সেনাবাহিনীর কাছে জমা
অস্ত্র দেখিয়ে জমি দখল করতেন এসআই আশরাফুল
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহীতে এলাকাবাসীর মারধরের শিকার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম জড়িয়ে পড়েছিলেন জমির কারবারে। তিনি সরকারি পিস্তল দেখিয়ে জমি দখলে নিতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই জমি বিক্রির নামে তিনি আবার টাকা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু জমিও দিতেন না, টাকাও ফেরত দিতেন না। টাকা চাইলে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর ভয় দেখাতেন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এই এসআই বুধবার নগরীর টুলটুলিপাড়া মোড়ে মারধরের শিকার হন। তিনি পিস্তল বের করে গুলি করার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী তার কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেন। পরে তা সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘটনার পর সবাইকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন এসআই আশরাফুল।
এ নিয়ে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তার নাম মিজানুর রহমান। হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মিজানুরকেই বুধবার গুলি করতে পিস্তল বের করেছিলেন এসআই আশরাফুল ইসলাম। মিজানুরের বাড়ি পার্শ্ববর্তী হড়গ্রাম পূর্বপাড়া মহল্লায়। জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে মিজানুর তার নানা অপকর্ম তুলে ধরেছেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, তিনি আশীষ চন্দ্র ঘোষ নামে এক ব্যক্তির সাড়ে ৭ কাঠা জমি কিনতে বায়না করেছেন। কিন্তু প্রায় ৮ মাস আগে এসআই আশরাফুল আশীষ চন্দ্র ঘোষের এই জমি দখল করে নিয়েছেন। এ নিয়ে এসআই আশরাফুলের সঙ্গে তার বিরোধ। বুধবার এসআই আশরাফুল ইসলাম তার সোর্স মোখলেসুর রহমানের মাধ্যমে তাকে টুলটুলিপাড়া মোড়ে ডাকেন। তিনি সেখানে গেলে আশরাফুল তাকে বলেন, মিজানুর যেন এই জমির দাবি না করেন। কিন্তু বায়না করা জমির দাবি কেন তিনি তুলবেন না, এমন প্রশ্ন করলে এসআই আশরাফুল তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ও তাকে মারধর শুরু করেন। এ সময় নাসির নামের এক ব্যক্তি তাকে রক্ষা করতে গেলে আশরাফুল তাকেও মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে গুলি করতে পিস্তল বের করেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, এসআই আশরাফুল এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী মো. রাজাকে জমি দেবেন বলে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন ৮ মাস আগে। জালাল নামের আরেক ব্যক্তির কাছ থেকেও জমি দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের জমি দেননি। জমির রেজিস্ট্রি চাইলে এ দুজনকে একাধিকবার পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখিয়েছেন এসআই আশরাফুল। এ ছাড়া তুলে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানোরও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, পুলিশে চাকরি দেওয়ার নামেও টাকা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আছে আশরাফুলের বিরুদ্ধে। তিনি আরএমপির কাশিয়াডাঙ্গা থানার গাড়িচালক আসাদ ও কনস্টেবল মাসুদ এবং বদরুলের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন তাদের আত্মীয়কে পুলিশে চাকরি নিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে। এই তিন পুলিশ সদস্য এখন টাকা ফেরত পেতে হন্য হয়ে ঘুরছেন। মিজানুর বলেছেন, গত ডিসেম্বর মাসে আশরাফুল তার ভাই মো. সেলিমকে তুলে নিয়ে যান। সেলিমের নামে কোনো মামলা কিংবা অভিযোগ ছিল না। আশরাফুল তাকে নাশকতার মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান। পরে এসআই আশরাফুলকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ডিবি অফিস থেকে ছাড়া পান সেলিম। অভিযোগে আরও বলা হয়, এসআই আশরাফুল এলাকায় মাদকসেবন করে বিভিন্ন সময় মাতলামি করে থাকেন। তিনি এলাকায় বিবদমান জমি কখনো নামমাত্র মূল্যে কেনেন আবার কখনো কখনো জোরপূর্বক দখল করেন।
বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে এসআই আশরাফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, এলাকাবাসী এসআই আশরাফুলের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার পর আমাকেই ফোন করেছিলেন। আমিই সেনা সদস্যদের পাঠিয়ে পিস্তলটি উদ্ধার করেছি। এই এসআইয়ের বিরুদ্ধে আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসনের যা যা করার দরকার তা আমি করব।
