Logo
Logo
×

খবর

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি : আতঙ্কে আহতরা

সাদুল্লাপুরের কামনা, লিপি ও স্মৃতির পরিবারে থামেনি কান্না

Icon

সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) গাইবান্ধা

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আজ ২৪ এপ্রিল। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে নয় তলা ভবন রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। এর মধ্যে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার স্মৃতি রানীর, ইউনুছ আলীসহ বেশ কয়েকজন পোশাক শ্রমিক রয়েছেন। আহত ও নিখোঁজ আছেন এই উপজেলার বেশ কয়েকজন। এ ঘটনার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও থামেনি স্বজনদের কান্না। আতঙ্ক কাটেনি আহতদের।

উপজেলার দামোদরপুর এলাকায় কিশামত দশলিয়া গ্রামের ভূমিহীন পঞ্চানন বাবু স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকেন। স্মৃতি রানীসহ তিন মেয়ে তার। ছেলে নেই। মেয়েদের মধ্যে সবার বড় স্মৃতি রানী। পরিবারের জন্য জমি কিনে বসতবাড়ি করার স্বপ্ন নিয়ে স্মৃতি পাড়ি দিয়েছিলেন ঢাকার সাভারে। সেখানকার রানা প্লাজার একটি পোশাক ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। সপ্তম তলায় ফিনিশিং সেকশনে হেলপার পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারান স্মৃতি রানী। চুরমার হয়ে যায় তার স্বপ্ন। খবর শুনে স্তব্ধ হয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। সন্তান হারিয়ে পঞ্চানন বাবু এখন বাকরুদ্ধ।

ভবনের সপ্তম তলায় কাজ করতেন ইউনুছ আলী। ঘটনার ১১ দিন পর তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

রানা প্লাজার পোশাক কারখানায় কাজ করতেন গাইবান্ধার দামোদরপুর এলাকার কামনা বেগম। এখনো তাকে খুঁজে পাননি স্বজনরা। কামনার সন্ধানে এখনো নির্ঘুম রাত কাটে মা মফিজানের। বুধবার কামনার বাড়িতে গেলে প্রতিবেদককে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মফিজান। মেয়ের ছবি বুকে ধরে কাঁদছিলেন আর কথা বলছিলেন তিনি।

মাহারা জেরিনের ঠাঁই এখন দাদির কোলে : রানা প্লাজা ধংসস্তূপ থেকে লিপি বেগম নামে এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার হয়। সাদুল্লাপুর উপজেলায় দামোদপুর গ্রামে তার বাড়ি। তার একমাত্র মেয়ে জেরিন আক্তারের ঠাঁই এখন দাদির কাছে। বৃদ্ধা দাদি জেলেখা বেগমের আদর-যত্নে বড় হচ্ছে জেরিন।

জানা যায়, একই গ্রামের জিল্লুর রহমানের সঙ্গে লিপি বেগমের বিয়ে হয়। তারা ঢাকায় থাকতেন। জিল্লু রিকশা চালাতেন। লিপি কাজ করতেন রানা প্লাজার একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে। বাসায় থাকত একমাত্র কন্যাশিশু জেরিন। স্বামী-স্ত্রী রোজগার করে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন-এমন স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছিলেন এই দম্পতি। ভবনের তৃতীয় তলার ডি-লাইনের সুইং হেলপার ছিলেন লিপি। রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে পাওয়া যায় তার লাশ। মেয়ে জেরিন এখনো মায়ের শোক বুকে ধারণ করে বেঁচে আছে। প্রতিবছর রানা প্লাজা দিবসে মায়ের কথা মনে করে কান্নায় বুক ভাসায় সে।

এখনো আতঙ্ক কাটেনি আহত দম্পতির : ধ্বংসস্তূপ থেকে আহতাবস্থায় উদ্ধার হয়েছিলেন সাদুল্লাপুর উপজেলার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান-মনিফা বেগম দম্পতি। সেই ভয়বহ দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় তাদের।

জিয়াউর রহমান ও মনিফা বেগম ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তারা বলেন, ‘যেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। এ ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া আশ্চর্য ব্যাপার। সেই দৃশ্য মনে ভেসে উঠলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম