২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ১ ভর্তি ২৬২
জুনের ২৮ দিনে ৫ হাজার ছাড়াল ডেঙ্গুরোগী
৫ মাস ২৮ দিনের সরকারি হিসাবে ভর্তি ৯৪৮৪ মৃত্যু ৪১
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অনুকূল আবহওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে দেশে এডিস মশার বংশবিস্তার বাড়ছে প্রতিদিন। সেই সঙ্গে বাড়ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব। এই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় চলতি জুন মাসের ২৮ দিনে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজার (৫১৩৯ জন) ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু ও ২৬২ জনহাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর ছয় মাসে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত রোগী ৯ হাজার ৪৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এসব রোগীর ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ ও ৪১ দশমিক এক শতাংশ নারী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া ডেঙ্গুবিষয়ক দৈন্দিন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪০ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৮ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আটজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪০ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ছয়জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ছয়জন ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) তিনজন রয়েছেন। এ সময় ২১৮ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরের এ যাবত আট হাজার ৩৮০ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের এ যাবত ডেঙ্গুতে ৪১ জন মারা গেছেন। সবশেষ মৃত একজন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনে বসবাসকারী একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ রাজধানীর প্রায় বেশির ভাগ ওয়ার্ডের বড় সমস্যা অভ্যন্তরীণ খালের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি। শহরের আবর্জনা ও ড্রেনের পানি নির্বিচারে খালে ফেলায় এসব খালের পানি দীর্ঘ বছর দূষিত কালচে দুর্গন্ধযুক্ত। এছাড়া অনেক এলাকার ডোবানালায় নিয়মিত পরিষ্কার না করার ফলে মশার উৎপাত বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন উন্নয়নের ফলেও মশার উপদ্রব বেশি।
মাসভিত্তিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের (২০২৪) জানুয়ারিতে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১০৫৫ জন, মারা যান ১৪ জন; ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৯ জন, মারা যান ৩ জন; মার্চে ভর্তি ৩১১, মৃত্য ৫; এপ্রিলে ভর্তি ৫০৪, মৃত্যু ২; মে মাসে ভর্তি ৬৪৪, মৃত্যু ১২; এবং জুনের প্রথম ২৭ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৯০ জন এবং পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। সব মিলে গত বছরের ২৮ জুন পর্যন্ত প্রায় ছয় মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিন হাজার ৫৪৭ জন এবং মারা যান ৪৩ জন।
অন্যদিকে চলতি জুনের ২৮ দিনেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত পাঁচ হাজার ১৩৯ জন ও ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।। এর আগে গত মে মাসে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক হাজার ৭৭৩ জন এবং মারা যান তিনজন; এপ্রিলে ভর্তি হয় ৭০১ জন এবং মারা যায় সাতজন; মার্চে ৩৩৬ জন ভর্তি হলেও কারও মৃত্যু হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি হন ৩৭৪ জন ও তিনজনের মৃত্যু হয়, জানুয়ারিতে ভর্তি হন এক হাজার ১৬১ জন এবং ১০ জনের মৃত্যু হয়। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত মৃত্যুর মিছিলে ৪১ জনের নাম যুক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। দেশে ২০২৪ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক লাখ এক হাজার ২১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর এই সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। আর মৃতের সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি তিন লাখ ২১ হাজার ১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর। ২০২২ সালে সারা দেশে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, যা বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
