Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

কাঁচা হলুদের পুষ্টিকথন

Icon

প্রকাশ: ১০ জুন ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হলুদ আমাদের দেশ ছাড়াও গোটা ভারতবর্ষের একটি জনপ্রিয় মসলা। এটি রান্না ছাড়াও অন্যান্য উপকারিতার জন্য বেশ বিখ্যাত। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে ওষুধ হিসেবে হাজার হাজার বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে হলুদ। এতে থাকে ফাইবার, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, সি, ই, কে, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, কারকিউমিন নামক রাসায়নিক উপাদান যা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাঁচায়। ঘুম থেকে উঠে কাঁচা হলুদ খেলে খাবার ঠিকমতো হজম হয়, ত্বকের ঔজ্জ্বল্যতা বাড়ে এসব কথা আমরা অনেকেই জানি, এবার জেনে নেই আরও কিছু অজানা গুণের কথা-

কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন রক্তনালিকে উন্মুক্ত করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমায়। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে প্রায় ৭৮.৯ শতাংশ ফ্যাটি লিভার কমে যায়, হেপাটাইটিস ভাইরাসের থেকে দেহকে রক্ষা করে। এটি লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ইনস্যুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে হলুদ ওষুধের মতো কাজ করে। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ইনস্যুলিন প্রতিবন্ধকতা কমাতেও সাহায্য করে।

টিউমার সৃষ্টিকারী রেডিয়েশনের বিরুদ্ধে কাজ করে ক্যান্সারের প্রতিরোধ করে কাঁচা হলুদ। এটি ক্যান্সার কোষকে নষ্ট করে টি-সেল লিউকেমিয়া, কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধ করে। হলুদ অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিসের জন্য অতুলনীয়। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হাড়ের ব্যথা দূর করে, শরীরের কোষকে নষ্টকারী ফ্রি রেডিকেল ধ্বংস করে। এটি লোহিত রক্তকণিকাকেও রক্ষা করে। এছাড়া এতে প্রচুর আয়রন ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ থাকায় তা রক্তে আয়রনের ঘাটতি কমিয়ে অ্যানিমিয়া থেকে রক্ষা করে।

কাঁচা হলুদের মধ্যে গ্যাস্ট্রো-প্রটেক্টিভ কিছু গুণ থাকায় খাবার পরিপাকে সাহায্য করে। হজমের গোলমাল, গ্যাসের সমস্যা এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যও কমায় এটি। ডায়রিরার সমস্যাতেও উপকার পাওয়া যায়। এতে থাকা কারকিউমিন, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে খাদ্যনালিকে বাঁচায়। খাবারে কাঁচা হলুদ বা হলুদ গুঁড়া ব্যবহার করলে তা খাদ্যনালিকে ক্ষতিকারক জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচায় ও খাদ্যনালির প্রদাহের সম্ভাবনা কমায়। হাড়ের ক্ষয় ও গঠনের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে হাড়কে সুস্থ ও মজবুত রাখে।

অ্যালজাইমার রোগটি এখন মারাত্মক আকারে দেখা যাচ্ছে, কাঁচা হলুদ মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে এর কাজকে উন্নত করতে সাহায্য করে আর এতে থাকা কারকিউমিন, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট স্মৃতিশক্তিকে রক্ষা করে অ্যালজাইমারের চিকিৎসায় সাহায্য করে। হলুদে থাকা ইস্ট্রোজেন হরমোন মেয়েদের প্রজননে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ দুধে মিশিয়ে নিয়মিত খেলে হরমোনজনিত সমস্যায় গর্ভ ধারণকে সহজ করে। কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলীর জন্য দাঁতের এনামেল নষ্ট, মাড়ি থেকে রক্তপড়া, মুখের ভেতরে ক্ষত সারাতে ও ক্ষয় থেকে বাঁচায়। বিষণ্ণতা কমাতেও সাহায্য করে। এটি প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে যার ফলে ঠাণ্ডা কাশি থেকে শুরু করে বেশিরভাগ রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

এটি প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। মাথাব্যথা, ফুলে যাওয়া, ক্ষত সারাতে অনেক কাঁচা হলুদ পেস্ট ব্যবহার হয়। কাঁচা হলুদ মেশানো দুধ অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ট্রিপটোফ্যান উৎপন্ন করে যা অনিদ্রা রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। ১ চা চামচ কাঁচা হলুদ পেস্ট প্রতি বেলার খাবারে রাখলে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ হলুদ খাবারের ফ্যাটের বাইল সল্টের ভাঙনের গতি বাড়াতে সাহায্য করে।

রূপচর্চায় হলুদের ব্যবহার অনেক প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। দুধের সঙ্গে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে নিয়মিত খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারুণ্যও ধরে রাখা সম্ভব। হলুদের প্যাক তৈরি করে লাগাতে পারলে ত্বকের বিভিন্ন দাগ, ব্রণ, রোদে পোড়া দাগ ও রিঙ্কেল কমে যায়।

তবে সব ভালো কিছুরও কিছুটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তাই হলুদের মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যের জন্য যাদের গলব্লাডারের সমস্যা রয়েছে তারা খাবেন না এবং ডায়াবেটিসের রোগীরা অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে খাবেন, কারণ হলুদ ওষুধের সঙ্গে মিশে অনেক সময় হাইপো গ্লাইসেমিয়া হতে পারে। এছাড়া অনেকের হলুদের অ্যালার্জি থাকতে পারে, তাই যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা খাবেন না। ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই নন ফ্যাট দুধ ব্যবহার করবেন।

পুষ্টিগুণ : ১০০ গ্রাম কাঁচা হলুদে ক্যালরি-৩৩৪ গ্রাম, শর্করা- ৬৪.৯ গ্রাম, প্রোটিন- ৭.৮৩ গ্রাম, ফ্যাট- ৯.৮৮ গ্রাম, ফাইবার- ২১ গ্রাম, ফোলেট-৩৯ আইইউ, নায়াসিন-৫.১৪ মিগ্রা, ভিটামিন সি-২৫.৯ মিগ্রা, ভিটামিন ই-৩.১০মিগ্রা, ভিটামিন কে-১৩.৪ আইইউ, ক্যালশিয়াম-১৮৩ মিগ্রা, আয়রন-৪১.৪২ মিগ্রা, জিংক-৪.৩৫ মিগ্রা, ফসফরাস- ২৬৮ মিগ্রা, কপার- ৬০৩ আইইউ।

গ্রন্থনা : শওকত আরা সাঈদা (লোপা)

ডায়েটিশিয়ান অ্যান্ড ইনচার্জ, পারসোনা হেল্থ, ধানমণ্ডি, ঢাকা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম