Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

বাবা তোমাকে ভালোবাসি

Icon

আঞ্জুমান আরা

প্রকাশ: ১০ জুন ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতিবছর জুনের তৃতীয় রোববার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাবা দিবস পালন করা হয়। আমাদের দেশেও আজকাল বেশ ঘটা করেই বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। যদিও বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না। তবে বাবার প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও কর্তব্য পালনে নতুন করে প্রত্যয়ী হয়ে উঠতে পারেন এমন একটি দিনটিতে।

দুটি বর্ণের একটি ছোট্ট শব্দ ‘বাবা’। ‘বাবা’ কথাটি ছোট হলেও এর মাঝেই লুকিয়ে আছে সন্তানের সবচেয়ে বেশি নির্ভরতা, স্নেহ আর সাহস। সন্তানের জন্য বাবার ভালোবাসা সীমাহীন। বাবা হাঁটতে শেখার সময়টাতে ছোট্ট ছোট্ট আঙুল ধরে হাঁটি হাঁটি পা পা করে সন্তানকে পথ চলা শেখান। ছায়া হয়ে সন্তানকে আগলে রাখেন যে কোনো বিপদ-আপদে। বন্ধু হয়ে পাশে থাকেন যে কোনো দুঃসময়ে। বাবার মাঝে জড়িয়ে আছে বিশালত্বের এক অদ্ভুত মায়াবি প্রকাশ।

মায়ের পরে শত আবদার, অনুযোগ পূরণ করার মতো নিঃস্বার্থ যিনি তিনি আর কেউ নন, বাবা। আমাদের কাছে মাকে মনে হয় বেশি আপন, কারণ বেশিরভাগ সময় মা আমাদের চোখের সামনে থাকেন। বাবা থাকে বাইরে। দিনের শুরু থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইরে খেটে যে মানুষটি আমাদের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেন, তার অবদান যেন আমরা দেখেও দেখি না। আমাদের অনেকের কাছে বাবাকে মনে হয় রাগী আর গম্ভীর কেউ! তাই অনেক পরিবারে বাবার সঙ্গে সন্তানের কিছুটা দূরত্ব দেখা যায়। অথচ আমরা সন্তানেরা বুঝতে পারি না বাবা তার গাম্ভীর্যের আড়ালে লুকিয়ে রাখেন সন্তানের সমস্ত অনিশ্চয়তা, প্রতিবন্ধকতা। যেন সন্তানের শরীরে দুশ্চিন্তার আঁচড় না লাগে।

একইভাবে আপনাকে ভাবতে হবে বাবার কথাও। বাবা হয়ত সারা দিনের ব্যস্ততা শেষে ক্লান্ত শরীর আর মন নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তার আবেগ অনুভূতি আর পরিণত বয়সের চাওয়া-পাওয়াগুলোর দিকে বাড়তি নরজ দিতে হবে। যে বয়সে স্কুল-কলেজে নতুন নতুন বন্ধ-বান্ধবের সঙ্গে সময়গুলো বেশ জমে উঠেছে সে সময়টাতে ভুলে যাওয়া চলবে না পুরনো বন্ধু বাবাকে। বরং পুরনো দিনের কথা মনে রেখে নিজের জীবনের এই খোলস ছাড়াবার মুহূর্তে যদি বাবাকেও সঙ্গী হিসেবে নেয়া যায় তাহলে বরং চেনা বন্ধুরাও নন-রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে জীবনের কঠিন পথে হোঁচট খাওয়ার ঝুঁকিটা কমে। যারা পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে দিব্যি কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন আয়-উপার্জন শুরু করেছেন তাদেরও সময় করে ভাবতে হবে বাবার কথা।

বিনোদন সাংবাদিক অভি মঈনুদ্দীন তার বাবাকে নিয়ে বলেন, আমার বাবার আদর্শেই আমি নিজেকে গড়ে তুলেছি। সিলেট ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনাকালীন সময়েই আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি যেন ডাক্তার হই। কিন্তু এইচএসসিতে মানবিক শাখায় পড়াশোনা করার পর কুমিল্লা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১৮তম স্থান অধিকার করার পর পরিবারের সবাই ভীষণ খুশি হন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করি। সাংবাদিকতায় আমার আজকের সাফল্যে আমার বাবা-মা খুশি, খুশি আমার পরিবারের সবাই। আমি একজন বিনোদন সাংবাদিক হিসেবে সব সময়ই গর্ব করি। কারণ সাংবাদিকতার বিভিন্ন বিট’র মধ্যে বিনোদন সাংবাদিকতাও অনেক কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। শিল্পীদের মুড বুঝে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক মেইনটেইন করে তাদের কাছ থেকে সংবাদ বের করে আনা অনেক কঠিন কাজ। বিশেষত যারা এদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি, তাদের কাছ থেকে সংবাদ বের করে আনা সাংবাদিক হিসেবে নিজের যোগ্যতারই নির্ণায়ক। আমার জীবনের চলার পথের প্রতিটি মুহূর্তে আমার বাবার আদর্শকে মাথায় রেখেই কাজ করে যাচ্ছি। সবার কাছে দোয়া চাই যেন আমার বাবা-মা’কে আল্লাহ ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন।

অফিসের ব্যস্ততার আর নানা ঝামেলার মাত্রাটা যতই সীমানা ছাড়িয়ে যাক না কেন, বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক মিনিটের জন্য হলেও তার পাশে বসতে হবে গল্পের ঝুড়ি নিয়ে। তাহলেই দেখবেন কোথায় যেন দিব্যি মিলিয়ে যাবে বাবার মাথায় চেপে বসা যত চিন্তা আর দুশ্চিন্তার বোঝা। মনে রাখবেন আপনার, আমার বাবা কিন্তু আমাদের কাছে বড় কোনো উপহার চান না। বরং ব্যস্ততার মাঝে বের করে নেয়া একটু সময় বাবাকে দিয়েই দেখুন না নিশ্চিত করে বলে দেয়া যায়, এমন কোনো বাবা নেই যিনি সন্তানের এই সান্নিধ্যটুকু উপভোগ করেন না।

জীবনের ঘানি টানতে টানতে বাবা এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন, বয়সের ভারে ন্যূব্জ হন, বার্ধক্য ও রোগব্যাধি তাকে গ্রাস করে। তখন তিনি হয়ে পড়েন অনেকটা অসহায়, দুর্বল। এ সময় বাবা চান সন্তান যেন তার পাশে থাকে, সব সময় যেমন তিনি ছিলেন সন্তানের পাশে তার সব প্রয়োজনে পাশে, যখন সন্তান ছিল শিশু অবস্থায়। সন্তানের কাছ থেকে অবহেলা কিংবা দুর্ব্যবহার পেলে বাবার হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তাই বাবা যেন কোনোভাবে অবহেলার শিকার না হন সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। সন্তানের কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া উচিত নয়, তাকে বড় করে তুলতে যোগ্য মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হতে এবং পথ চলতে বাবা তার জন্য কত ত্যাগ করেছেন, জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আনন্দ বিসর্জন দিয়েছেন। বিনিময়ে কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে তার জন্য এত কিছু করেননি। তবে কর্মজীবনে ছোট ছোট কাজে বাবা সন্তানের সাহায্য চান। সন্তানের সহযোগিতায় বাবার অনুভূতিতে বুক ভরে যায়। অন্যদিকে জীবনের অমোঘ নিয়মে যারা বহুদিন আগেই বাবাকে হারিয়েছেন তাদের সন্তানরাও কিন্তু বাবাকে ভালোবেসে করতে পারেন অনেক কিছু। এটা হতে পারে বাবার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা কিংবা বাবার অপূর্ণ ইচ্ছা আর বাবার আদর্শের বাস্তবায়ন। সারা জীবনের সাধনায় বাবা আপনাকে যেখানে দেখতে চেয়েছিলেন বাবার মৃত্যুর পর সে জায়গায় যদি নিজেকে নিয়ে যেতে পারেন এবং উজ্জ্বল একটি অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, তবে সেটা বাবার প্রতি ভালোবাসা ও যথার্থ সম্মান দেখানো হবে বৈকি। বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনেই বা শুধু বাবা দিবসেই নয়, বছরজুড়ে নানা কাজে-কর্মে, আদর্শ বাস্তবায়নে বাবাকে স্মরণ করুন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম