এ সময়ে হাত ও পায়ের যত্ন
দিনভর আমাদের যে এত ছোটাছুটি, এত ঘুরে বেড়ানো, এত হেঁটে চলা। দিনশেষে ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে নিয়ে ঘরে ফেরা। সারা দিনের এ সময়টাতে আমাদের বহন করে চলে আমাদের দু’টি পা। দিনশেষে আমরা যেমন ক্লান্ত ও মলিন হয়ে যাই, আমাদের পা-ও তেমনি। বর্ষায় এই রোদ তো এই মেঘ, একটু পরেই আবার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। এমন দিনে পায়ের অবস্থা বেহাল হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ আমাদের তো থেমে থাকলে চলবে না। ছুটে চলতেই হয়। আর তাতে কাদা-পানিতে মাখামাখি হয়ে পায়ের চেহারা নাজুক হয়ে পড়ে। হতে পারে ফাঙ্গাল ইনফেকশন, চুলকানি, পায়ের দুর্গন্ধ ও কালো ছোপ ছোপ দাগ। পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি পায়ের সুস্থতাও নিশ্চিত করতে হবে। যেন পায়ের দিকে তাকালেই আপনার রুচির পরিচয় পাওয়া যায়। এদিকে হাত দুটি কি থেমে থাকে? মোটেই না! দুটি হাতকেই তো সামলাতে হয় দিনের সব কাজ। ব্যস্ত হাতে খাবার তৈরি থেকে শুরু করে কী-বোর্ডে ঝড় তোলা- সবই তো করতে হয়! যে হাত দুটি আপনার এতটা যত্ন নেয়, তাকেও যত্নে রাখতে হবে। এ বর্ষায় হাত ও পায়ের যত্ন নিতে হবে সঠিকভাবে, সঠিক উপায়ে।
হাবীবাহ্ নাসরীন
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বর্ষায় যতটা সম্ভব হাত-পা শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। এ সময় কাদাপানি এড়িয়ে চলুন। বৃষ্টির পানিতে পা ভেজানো ঠিক নয়। কেননা, বর্ষাকালে খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। তাছাড়া বর্ষায় ভেজা জুতা বেশিক্ষণ পরে থাকলে পায়ের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যাদের পা ফাটার সমস্যা রয়েছে তাদের এ সময় বাড়তি সচেতন থাকা উচিত। বর্ষায় বাইরে থেকে ফিরে একটি পাত্রে হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে অল্প পরিমাণে স্যাভলন বা ডেটল ৫-৭ মিনিট হাত-পা ডুবিয়ে রেখে তুলে ফেলুন। হালকা হাতে লুফা দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। তারপর কোনো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে পা ধুয়ে ফেলুন। বর্ষায় হাত-পায়ের নখ যত ছোট রাখা যায় ততই ভালো; নয়তো নখের নিচে জমে থাকা ময়লা প্রচুর ভোগান্তি কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসময় প্রতিদিন গোসলের সময় লুফা দিয়ে পা ঘষে পরিষ্কার করুন। যদি হাতে সময় থাকে তবে ১০ মিনিটের জন্য শাওয়ার জেল অথবা শ্যাম্পু গোলা পানিতে পা ভিজিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
বর্ষায় হাত-পায়ের যত্নে মেনিকিউর-পেডিকিউর করুন। প্রথমে নিমপাতা দিয়ে পানি ফুটিয়ে নিন, তারপর পাতিলেবুর রস, অল্প লবণ ও শ্যাম্পু মিশিয়ে হাত-পা ডুবিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এরপর পিউমিস স্টোনের সাহায্যে গোড়ালি এবং পায়ের তলা ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। হাত-পা শুকনো করে মুছে ভালো কোনো ক্রিম পায়ে লাগিয়ে নিন।
এ সময় অনেকের পায়েই কালো কালো ছোপ পড়তে দেখা যায়। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে, মসুর ডাল বাটা, দুটি আমন্ড বাটা, দুধ এবং ১ চা চামচ গ্লিসারিন দিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে পায়ে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে দুধ দিয়ে ভালো করে ঘষে তুলে ফেলুন। তারপর হালকা গরম পানিতে পা ধুয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
বর্ষায় হাত-পা পরিষ্কার রাখতে ব্যবহার করুন স্ক্রাব। দুই টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে, হলুদ বাটা, নিমপাতা বাটা মিশিয়ে হাত-পায়ে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর হালকা গরম পানিতে ঘষে পা ধুয়ে নিন। ভালো করে মুছে লাগিয়ে নিন হালকা অলিভ অয়েল লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠে দেখবেন নরম মসৃণ হাত-পা। পায়ের ক্লান্তি দূর করতে ঠাণ্ডা পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পা ডুবিয়ে রাখুন। ক্লান্তিও দূর হবে এবং সানট্যানও কমে যাবে। পায়ের গোড়ালি সতেজ রাখতে ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল এবং নারিকেল তেল সমপরিমাণে মিশিয়ে এর সঙ্গে মেশান দুই চা চামচ চিনি ও লেবুর রস। পায়ের শক্ত চামড়ায় ঘষতে থাকুন যতক্ষণ না তেল ত্বকে শুষে নিচ্ছে।
পায়ে গন্ধ হলে নিয়মিত পেডিকিউর মেনে চলুন। পা ভালোভাবে পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগান হালকা করে। এরপর খানি ট্যালকম পাউডার লাগিয়ে নিন। সবসময় বন্ধ জুতা না পরে খোলা জুতা বা স্যান্ডেল পরুন। অফিসে যদি জুতা পরতেই হয় তাহলে সুতি মোজা পরুন। আর মাঝে মধ্যে জুতা খুলে রাখুন, বাতাস চলাচলের জন্য। দিনশেষে প্রতিদিন ঘরে ফিরে পা ধুয়ে নিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ময়েশ্চারাইজ লোশন, ফুট ক্রিম বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগান। ভালো ফল পেতে মোজা পরে নিন। সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠুন নরম পা নিয়ে এবং যা থাকবে শুষ্কতামুক্ত।
