Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

ফুলের সাজে ফুলপরী

Icon

আঞ্জুমান আরা

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফুল সৌন্দর্য, স্নিগ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক। ফুল নামটি শুনলেই যেন আনন্দে নেচে ওঠে মন, নির্মল হয়ে যায় হৃদয়। নানা রঙের ফুলের আবির আর মৌ মৌ গন্ধ কেড়ে নেয় বিষাদ। ভালোবাসার প্লাবনে ভাসিয়ে দেয় মন। ফুলের সৌন্দর্যে নিমিষেই চারপাশ হয়ে ওঠে আকর্ষণীয়। নারীর সাজসজ্জাতে ফুল যেন এক নান্দনিক অলঙ্কার। স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ফুলের নির্যাসের রয়েছে জাদুকরী গুণ। তাই তো ফুলের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব যুগ যুগ ধরে। ফুল কেবল আমাদের সুবাসিত রাখে না, ফুলের নজরকাড়া সৌন্দর্যের কারণে বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠান, গৃহসজ্জা থেকে নারীর সাজসজ্জায় ফুল এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সেখানে ফুলের সাজে ফুলপরী হয়ে উঠতে পারেন যে কেউ।

প্রকৃতির হাজার রং, রূপ, সুগন্ধির ফুল আমাদের সৌন্দর্য ও সুবাস ছড়ায় প্রতিদিন। একেক ঋতুতে একেক ধরনের ফুল দেখা যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে বর্ষা যেন প্রকৃতির রাণী। বর্ষায় কদম, কেতকী, পদ্ম, শাপলার হাসিতে মুখরিত হয় প্রকৃতি। তাল তমাল শাল পিয়াল আর মরাল কপোতের বন বীথিকায় চোখে পড়ে বকুল, জারুল, পারুল, কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়ার নয়ন জোড়ানো সৌন্দর্য। স্পাইডার লিলি, দোলনচাঁপা, অলকানন্দ, রঙ্গন, রজনীগন্ধা, মালতীলতা, জবা, নয়নতারা, বেলি, কামিনী, দোপাটিসহ বিচিত্র্য ফুলের সৌরভে চারপাশ ভরে ওঠে। বলা হয়ে থাকে ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’, তাই বর্ষার শুরুতেই মিলে কদমের সৌরভ। তারপর ফুটতে শুরু করে রজনীগন্ধা, মালতীলতা, চালতা, জুঁই, কেয়া। আগের মৌসুমে ফোঁটা গন্ধরাজ, রঙ্গন, রক্তজবা, টগর, শ্বেতকাঞ্চন বা ঘণ্টাফুলের উজ্জ্বলতা তখনও স্নান হয় না। ভরা বাদল দিনে বেলি, স্বর্ণচাঁপা কিংবা দোলনচাঁপা বাতাসে ছড়ায় মনমাতানো সৌরভ। আগে ফোটা শুরু হলেও বর্ষা ঋতুতেই সবচেয়ে বেশি থাকে বকুল। আর বৃষ্টিতে গা ধুয়ে সবুজ পাতার শাড়ি পরে দোলনচাঁপা।

অন্দরসজ্জায় তাজা ফুল

গৃহসজ্জায় তাজা ফুলের ব্যবহার ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। এ জন্য ঘরে ঢোকার প্রবেশমুখে কিংবা বসার ঘরে মাটির পাত্রে ভাসিয়ে দিন শাপলার কলি কিংবা কিছু গোলাপ। সন্ধ্যে নাগাদ সবুজের পটভূমিতে পূর্ণ যৌবনা শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যে জুড়াবে চোখ। অন্দরে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে রাজনীগন্ধার কিছু স্টিক একটি পটারিতে সাজিয়ে রাখতে পারেন। শোয়ার ঘরের শোভা বাড়িয়ে নিন শুভ্র সাদা দোলনচাঁপায়। এর সৌন্দর্য ও সুবাস দিন শেষে ক্লান্ত দেহ হারিয়ে যাবে ভালোলাগার মাদকতায়।

চাইলে অর্কিডও ঝুলিয়ে দেয়া যেতে পারে শোবার ঘরের জানালায় কিংবা দেয়ালে। বসার ঘরের কোনো একটি কোণ, শোয়ার ঘরের সাইড টেবিল কিংবা খাওয়ার টেবিলের মাঝখানটা ইকেবানা স্টাইলে সাজিয়ে নেয়া যেতে পারে রঙ্গন ফুলে।

চুলের বাঁধনে ফুল

চুলের সাজে ফুল নিয়ে আসে এক ভিন্ন আবেদন। প্রচলিত ফুলের বাইরেও নানারকম ফুল চুলের বাঁধনে জড়াতে পারেন। হাত খোঁপা বা এলো খোঁপায় গুঁজে দিতে পারেন জারবারা, দোলনচাঁপা, গোলাপ, রঙ্গন, কাঁঠালচাঁপা কিংবা শাপলা। খোঁপা করার আগে কিছু চুল আলাদা করে রেখে খোঁপা করুন। এরপর আলাদা করে রাখা চুলগুলো দিয়ে বেণি করে খোঁপার চারপাশে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিন। খোঁপার একপাশে কিংবা চারপাশে ছোট গোলাপ, জিনিয়া, কারেনশন গুঁজে দিন।

আবার খোঁপার একটু ওপর থেকে ডাঁটাসহ অর্কিড, বাগানবিলাস দিয়েও জড়িয়ে ফেলতে পারেন। উঁচু করে খোঁপা করে মাথার মাঝবরাবর কয়েকটি গোলাপ পর পর বসিয়ে দিতে পারেন। এই ফ্রিদা হেয়ার স্টাইল ক্যাজুয়াল পার্টিতে ভালো লাগবে। সন্ধ্যা পার্টিতে খোঁপাজুড়ে বেলি ফুলের ছড়াছড়ি ছড়িয়ে দিবে সুবাস। চুলের সাজে বেণিরও জুড়ি নেই। খেজুর বেণি, টুইস্ট বেণি, এলো বেণি, ফ্রেঞ্চ বেণিসহ নানা ঢঙে বেণি করে জিনিয়া, তারাফুলসহ বিভিন্নরকম ছোট ছোট ফুল বসিয়ে দিন পুরো বেণিতে। আবার রঙ্গন, গাজরা, বেলির মালাও পেঁচিয়ে দিতে পারেন বেণিতে। চুল ছেড়ে একপাশে আটকে দিতে পারেন জারবেরা, গোলাপ, জবা, অলকানন্দাসহ বিভিন্ন ফুল। শুধু উৎসব-অনুষ্ঠানেই নয়, নিত্যদিনের সাজেও রাখতে পারেন ফুল। রাস্তায় হাঁটার সময় একগুচ্ছ কৃষ্ণচূঁড়া কিংবা চলতি পথের কোনো বুনোফুল কুঁড়িয়ে গুঁজে দিতে পারেন কানের পাশে। অথবা বর্ষায় কদম ফুলের সাজে আপনি হয়ে উঠতে পারেন বর্ষার রাণী।

বিয়ের উৎসবে

বিয়ের কনে বা বিয়েবাড়ির দাওয়াতে ব্যবহার করতে পারেন বড়-ছোট নানা ফুল। চুলের বাঁধন ছাড়াও বিয়ের দাওয়াতে খুব ছোট আকারের গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, কসমস টিকলির মতো ব্যবহার করতে পারেন।

ফিউশনে ফুল

শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ ছাড়াও ফতুয়া, টপস, গাউন, ম্যাক্সিড্রেসের মতো ফিউশন পোশাকের সঙ্গেও ভালো লাগে ফুল। এ ধরনের পোশাকের সঙ্গে ন্যাচারাল সাজ, মডার্ন হেয়ারস্টাইল ও ছোট আকারের ফুল বেশি মানায়। এক্ষেত্রে অর্কিড, পটুনিয়া, চেরিসহ বিদেশি ফুল ভিন্নতা আনবে।

ফুল যখন গয়না

বিভিন্ন উৎসবে পরতে পারেন ফুলের গয়না। গাঁদা, গোলাপ, জারবারা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ফুল দিয়ে বানাতে পারেন গলার মালা ও কানের দুল। হাতে ব্রেসলেটের মতো করে বেলি ফুলের মালা কিংবা শাড়ির সঙ্গে কোমরে জারবারার বিছা পরে সাজে আনতে পারেন বৈচিত্র্য।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম