Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

খেজুর গাছে রসের ধারা

Icon

লেখা ও ছবি সুমন্ত গুপ্ত

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর পাঁচটা হবে সূর্য। মোবাইল ফোন বেজে উঠল দাদা আমি চলে এসেছি আপনি দ্রুত তৈরি হয়ে চলে আসুন। দেরি করলে আজও যাওয়া হবে না। গত দিনও আমরা যেতে চেয়েছিলাম বাদ সেধেছিল বৃষ্টি শেষ পর্যন্ত আর যেতে পারিনি। তাই আজ আর দেরি না করে তৈরি হয়ে গেলাম। ঘড়ির কাঁটার পাঁচটা ত্রিশ মাঘ মাস কুয়াশার চাদরে ঢাকা জনপথ। এর মাঝেই আমরা ছুটে চলছি। ও বলাই হল না, আমরা যাচ্ছি খেজুরের রসের সন্ধানে। অফিসে কাজের চাপে যখন পিষ্ট তখন মাথার বোঝা ঝেড়ে ফেলে দেয়ার জন্য চোখ ফেলেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তখন সন্ধান পেলাম। সিলেট নগরী থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে সিলেট সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কান্দিগাঁও ইউনিয়নে একটি এতিম খানায় বিক্রি করা হয় খেজুরের রস। যাত্রাপথে এর আগে আসা হয়নি তাই পথিমধ্যে আমাদের গাড়ি থামিয়ে আমরা সঠিক পথে আছি কিনা তা জানতে চাইলাম। যদিও পথে জনমানব নেই বললেই চলে তাই একটু সময়ই লাগল বৈকি। দূর থেকে দেখতে পেলাম খেজুর গাছের।

গন্তব্যের কাছে এসে যে দৃশ্য দেখলাম ফজরের আজানের আগেই প্রাইভেটকার, মোটরবাইক, সিএনজি অটোরিকশা করে শতাধিক মানুষ এসে হাজির এতিমখানার পাশে। সাধারণত এ এতিমখানার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ছাড়া এখানে কোনো মানুষের আনাগোনা থাকে না। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে কাকডাকা ভোর থেকে এ এতিমখানার আশপাশে ভিড় করছেন মানুষজন। সবাই আসছেন খেজুরের রস খেতে। গাড়ি থেকে নেমে আমরা পদব্রজে এগিয়ে গেলাম। গ্রামীণ মেঠোপথ আর খেজুর গাছের সারির সেই মুগ্ধতা ভাষায় বর্ণনা করার চেষ্টা নেহায়েতই বৃথা। প্রকৃতির তৈরি খেজুর সাম্রাজ্য, যা চোখে দেখেও বিশ্বাস করা কঠিন। চোখ ভরে গেল খেজুর গাছের সারি আর রসের ঠিলা দেখে।

দোয়েল, বুলবুলি, শালিকসহ নানা রকম পাখি রসের চুঙ্গিতে বসে রস খাচ্ছে আর উড়াল দিচ্ছে, মৌমাছিরাও রস খাওয়ার আশায় ভোঁ ভোঁ করে উড়ে বেড়াচ্ছে। গাছি মো. ইমান আলী গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামাতে দেরি হয় কিন্তু হাঁড়ি শেষ হতে দেরি হয় না। সকাল ৭টার ভেতরে শেষ হয়ে যায় রসের হাঁড়ি। এতিমখানার দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদর উপজেলার জাঙ্গাইল টুকেরবাজার এলাকায় গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে দারুল আয়তাম হালিমাতুস সাদিয়া (রা.) এতিমখানার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপরই এতিমখানার দায়িত্বরতরা খেজুর গাছসহ অন্য গাছগুলোর পরিচর্যা শুরু করেন। এতিমখানার কাজে লাগানোর জন্য গাছগুলো থেকে রস নিয়ে গুড় বানানোর চিন্তা করেন তারা। সেজন্য সুনামগঞ্জের নারায়নতলা এলাকার ইমান আলী নামের একজন গাছিকে মৌখিক চুক্তিতে আনেন এতিমখানার কর্তৃপক্ষ। গাছি ইমান আলী জানান, এখানে ৬৩টি খেজুর গাছ আছে। এর মধ্যে ৫৫টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। বাকি গাছগুলো থেকে রস আসে না। গত একমাস ধারে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করছেন তিনি। এতিমখানার শিক্ষার্থীদের রস খাইয়ে বাকি রস দিয়ে গুড় তৈরি শুরু করেন। প্রতিদিন ২০ থেকে ১০০ লিটার রস পাওয়া যায় এ গাছগুলো থেকে। সব গাছ থেকে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করা হয় না। একটি গাছ থেকে দুই দিন বিরতি দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। যে গাছ দুর্বল হয়ে যায় সে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা বন্ধ করে দেন গাছি। মাটির হাঁড়ি ও প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। প্রতি গ্লাস খেজুরের রস ১০ টাকা ও প্রতি লিটার খেজুরের রস ৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। আমরা খেজুরের রসের স্বাদ আস্বাদন করলাম এক কথায় অসাধারণ।

যাবেন কিভাবে : ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, রাজারবাগ ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রিনলাইন, শ্যামলী, এনা, হানিফ বা বিআরটিসি বাসে অথবা ট্রেনে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকালে আন্তঃনগর পারাবাত, দুপুরে জয়ন্তিকা ও কালনী এবং রাতে উপবনে সিলেটে। সিলেট নগরী থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে সিলেট সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কান্দিগাঁও ইউনিয়নে দেখা পাবেন খেজুর গাছ ও রসের। সিলেট শহর থেকে মাইক্রোবাস/সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে হবে ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ১২০০ টাকা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম