ভালোবাসা ভালোবাসা...
হাবীবাহ্ নাসরীন
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এ সময়ে ভালোবাসার গভীরতা নির্ণয় কিছুটা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে বটে, যখন কিনা প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক অনেকটাই সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। এখন চাইলেই আপনি মাউসের এক ক্লিকে কিংবা ফোনের স্ক্রিনে একটি টাচের মাধ্যমেই বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারেন। গড়ে উঠতে পারে নিত্যনতুন সম্পর্ক। প্রযুক্তি আমাদের যতটা বেগ দিয়েছে, ততটাই কেড়ে নিয়েছে আবেগ। তারপরও আবেগ কি সবটুকুই হারিয়ে গেছে? নাকি প্রযুক্তির হাত থেকে আমরা এখনও কিছু আবেগ বাঁচিয়ে রেখেছি? সম্পর্কে বিশ্বস্ত থেকে ভালোবাসাকে আঁকড়ে বেঁচে থাকছি? আমাদের ভালোলাগাগুলো কি এখন শুধু চোখের দেখা আর লোক দেখানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নাকি পুরনো দিনের প্রেমের মতো পবিত্রতা এখনও বজায় রাখতে পারছি?
প্রেমের প্রসঙ্গ এলেই বয়োজ্যেষ্ঠরা রে রে করে ওঠেন। তারা দাবি করেন, তাদের সময়কার প্রেমই ছিল খাঁটি। চোখ বন্ধ করে তারা সেসব দিনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন, যখন তাদের প্রিয়তম কিংবা প্রিয়তমার কাছ থেকে একটি চিঠি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হতো মাসের পর মাস। একটু চোখের দেখা পাওয়ার অপেক্ষায় হয়তো বছর কেটে যেত। আর স্পর্শ? ওরে বাবা! হাতটা ছুঁয়ে দিতেই অপেক্ষা করতে হতো পরিণয়ের মতো আকাঙ্ক্ষিত পরিণতির।
চিঠির ভেতরে চুমু এঁকে দেয়া আর গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দেয়ার ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল ভালোবাসার বাড়াবাড়ির। ভাগ্য খুব বেশি ভালো হলে হয়তো কখনও কখনও টেলিফোনে কথা বলার এক-আধটু সুযোগ পাওয়া যেত। আর তখন আবেগের চাপে সব কথা বলা হতো না ঠিকভাবে। প্রকাশের চেয়ে অনুভবেই বেশি জমা থাকত ভালোবাসা।
প্রেমের জন্য এতটা ত্যাগ কিংবা কষ্ট এখনকার প্রেমিক-প্রেমিকাকে করতে হয় না- একথা যেমন সত্যি, তেমন সত্যি হল সবকিছুর এমন সহজলভ্যতার সময়ে মনের মানুষটির সঙ্গে সারা জীবন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকাটাও সহজ কিছু নয়। একবার চিন্তা করুন, চাইলেই নিত্যনতুন মানুষের সঙ্গে মনের কথা ভাগাভাগি করা যাচ্ছে, একটি বাছতে গেলে চলে আসছে আরও অনেক সুযোগ। এমন অবস্থায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া এবং একজন মানুষের সঙ্গে একটি জীবন কাটিয়ে দেয়ার মতো সৎ সাহসও রাখতে হচ্ছে এ সময়ে প্রেমিক-প্রেমিকাদের। অনেক সুযোগ পাওয়ার পরেও নিজেকে সংযত রাখা এবং লোভ সামলে চলার মতো পরীক্ষায় সবাই যে ফেল করছে- তা কিন্তু নয়। বরং কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হচ্ছে বেশিরভাগই। ভালোবাসার ক্ষমতা এমনই আগ্রাসী- যে সে যার ওপর ভর করে, তার আর কোথাও লোভ জন্মায় না শুধু ভালোবাসা ছাড়া।
ভালোবাসার নামে প্রতারণা, ভালোবেসে প্রতারিত হওয়ার মতো খবর আমরা পত্রিকা খুললেই দেখতে পাই। এসব খবর হতাশার জন্ম দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু প্রেমিক হৃদয়কে আশাবাদী হতে হয়। প্রতারকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার মানে কিন্তু ভালোবাসা হারিয়ে গেছে- এমন নয়। বরং আপনি যদি ভালোবাসায় বিশ্বাসী হন কিংবা সত্যিকারের ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন, তবে জানবেন, কেউ একজন আপনাকে আপনার মতো করেই ভালোবাসার জন্য তৈরি আছেন।
ভালোবেসে কষ্ট পাওয়ার ভয় থাকে, যদি আপনি ভুল মানুষকে ভালোবাসেন। তাই ভুল মানুষকে নয়, ভালোবাসুন নিজের জন্য সঠিক মানুষটিকে। অপরজন কতটুকু সৎ, সেই হিসাবে যাওয়ার আগে নিজে বিশ্বস্ত থাকতে চেষ্টা করুন। ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলার কিংবা টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব দুজনেরই- যে কোনো একজনের নয়। সম্পর্কে সুতো একদিক থেকে ঢিলে হলে তা পথ হারাতে বাধ্য! তাই বাঁধন শক্ত করে রাখতে হয় দুজনকেই। যখন কাউকে ভালোবাসবেন, মন খুলে বাসবেন। ভালোবাসায় কার্পণ্য করলে তা আপনাকে মানসিক শান্তি দেবে না। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, আপনাদের ভালোবাসা যতই গভীর হোক না কেন, তা দেখিয়ে বেড়ানোর মানসিকতা রাখবেন না। কথায় আছে, যে নদীর গভীরতা যত বেশি, তার বয়ে চলার শব্দ তত কম। তাই কথায় নয়, কাজেই প্রমাণ হোক ভালোবাসার। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি মিলিত হোক একই বিন্দুতে। ভালোবাসার পবিত্র ধারা প্রবাহিত হোক হৃদয় থেকে হৃদয়ে। যার হৃদয় যত বেশি মমতা আর ভালোবাসায় পূর্ণ, যাদের সম্পর্ক সবচেয়ে স্বচ্ছ ও সুন্দর, তারাই তো সবচেয়ে বেশি আধুনিক!
