|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রকৃতিতে চলছে বসন্তবরণের আয়োজন। কুঞ্জে কুঞ্জে শুরু হয়ে গেছে পিউ পাপিয়ার গুঞ্জন। সব প্রস্তুতি শেষ করে প্রকৃতি এখন ফুলেল হাসিতে কবিগুরুর ভাষায় আহ্বান করছে-
‘ওরে গৃহবাসী
খোল, দ্বার খোল, লাগল যে দোল।
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল।
দ্বার খোল, দ্বার খোল।’
আসছে ফাল্গুন। আর এ ফাল্গুনের হাত ধরেই বাংলার প্রকৃতিতে আগমন ঘটবে ঋতুরাজ বসন্তের। বসন্তের আগমনে ইতিমধ্যে প্রকৃতি নানা রূপে, ফুলে-ফুলে, পাতায়-পাতায় সেজে উঠতে শুরু করেছে। চারপাশ ফুলের মৌ মৌ সুগন্ধে সুরভিত হয়ে উঠেছে। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নূপুরের নিক্কন সবই খুঁজে পাওয়া যাবে বসন্তের এ প্রকৃতিতে। তাই তো কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন- ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক/আজ বসন্ত।’
বসন্তকে বরণ করে নিতে প্রকৃতির প্রস্তুতি তো শেষ, আপনি প্রস্তুতি নিয়েছেন কি? ভেবেছেন কি কীভাবে সাজবেন বসন্তকে বরণ করে নিতে? হলুদ শাড়িতে খোঁপায় গুঁজবেন লাল-বেগুনি চন্দ্রমল্লিকা, নাকি লম্বা বেণীতে জড়াবেন হলুদ গাঁদার মালা?
ছুটির দিন, বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একই দিন হওয়াতে এবার এ উৎসব দুটিতে মুখরিত হয়ে উঠবে পুরো দেশ। উৎসবের সাজে সেজে উঠবেন নারী-পুরুষ সবাই। এ দিন সাজপোশাকে হলুদ-কমলার প্রাধান্য বেশি থাকলেও ভালো লাগবে সবুজ, নীল, লালসহ প্রকৃতির উজ্জ্বল নানা রংও। বাসন্তী সাজে যেমন কচি পাতার সবুজ শাড়িতে হলুদ রঙের পাড় ভালো লাগবে তেমনি ম্যাজেন্টা, লাল রঙের শাড়ির সঙ্গে হলুদ রঙের ব্যবহারও ভালো লাগবে। কারণ ফাল্গুনের প্রকৃতিতে হলুদ রঙের ফুলের প্রাধান্য বেশি থাকলেও অন্য রঙের ফুলও তো ফোটে। এ কারণে প্রকৃতির রংগুলোই ফাল্গুনের সাজে তুলে আনুন পোশাকে।
বসন্ত এবং ভালোবাসা একই দিন হওয়াতে শাড়িতে এবার থাকছে উৎসবের ছোঁয়া। যেমন একরঙা হলুদ শাড়ির পাড়জুড়ে ব্যবহার হয়েছে গোলাপি, গাঢ় নীল আর জরির পাড়। বাসন্তী শাড়িতে ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, চেকের তুলনা নেই। চলতি ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফ্লোরাল প্রিন্টের শাড়িও অনন্য। তবে বসন্ত এবং ভালোবাসা দিবসকে একই সঙ্গে প্রাধান্য দিতে চাইলে সিল্ক বা মসলিন শাড়িতে রাখতে পারেন হ্যান্ডপেইন্ট হালকা নকশার অ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ।
এছাড়া নিজেও কাস্টমাইজ শাড়ি তৈরি করিয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে গজ কাপড় কিনে তাতে কয়েক ধরনের লেস লাগিয়ে নিতে পারেন। অ্যাম্ব্রয়ডারি, বাটিক, টাইডাই, অ্যাপ্লিক বা কাটওয়ার্কের কাজও করাতে পারেন। চাইলে দু’ধরনের কাপড় কিনে কুঁচি স্টাইলেও তৈরি করে নিতে পারেন আপনার পছন্দের শাড়িটি।
ফাল্গুনের পোশাক মানেই এখন আর শুধুই শাড়ি নয়, শাড়ির সঙ্গে যোগ হয়েছে সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, স্কার্ট, টপসসহ নানা ধরনের পোশাক। এ দিনে লম্বা ছাঁটের দু-তিনটি স্তরের কিংবা ইচ্ছামতো কাটের সালোয়ার-কামিজসহ যে কোনো লং ড্রেসও পরা যায়। সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, টপসে এবার টাইডাই, ব্লক, স্প্রে, অ্যাপ্লিক, কাটওয়ার্ক, ভেজিটেবল ডাই, অ্যাম্ব্রয়ডারি, ফ্লোরাল প্রিন্ট প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। যেহেতু মৌসুমটি বিদায়ী শীতের- তাই দিনের বেলাতে আবহাওয়ায় উষ্ণভাব থাকতে পারে। এ কারণে সুতি কাপড়ে আরাম পাওয়া যাবে সারা দিন। রাতের জন্য বেছে নিতে পারেন জর্জেট বা শিপন, মসলিন, সিল্ক, ধুপিয়ান কাপড়।
ছেলেদের পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবি আর ফতুয়া তো আছেই। কয়েক বছর ধরে বসন্তবরণে টি-শার্টও পরতে দেখা যাচ্ছে তরুণদের। টি-শার্টের নকশায় তুলে ধরা হয় তারুণ্য এবং বসন্তের প্রকৃতিকে। আছে বিভিন্ন রং মিশিয়ে তৈরি কটি। হালকা রঙের পাঞ্জাবির ওপরে এ উজ্জ্বল কটিতেই বাজিমাত হতে পারেন আপনার ফাল্গুনের ভালোবাসা।
ফাল্গুনে মুখের সাজ ন্যাচারাল রাখুন। কারণ ফাল্গুন প্রকৃতিরই একটি বড় সাজ। তাই আপনিও থাকুন প্রকৃতির মতো। বেইজ মেকআপের আগে অবশ্যই মুখ ক্লিন ও স্ক্রাবিং করে নিবেন। এরপর সানস্ক্রিন এবং ময়েশ্চারাইজার লাগান। ফাউন্ডেশনের আগে একটা ভালো প্রাইমার লাগাবেন। ফাউন্ডেশন হিসেবে বেছে নিন ফুল কভারেজ ফাউন্ডেশন। এরপর কন্ট্যুরিং পাউডার ব্যবহার করে হালকা কালার যেমন- পিংক, কোরাল, পিচ রঙা ব্লাশন লাগিয়ে নিন। এরপর দিন পাউডার হাইলাইটার। ফাল্গুনে চোখের সাজের জন্য ব্যবহার করুন কোরাল, পিচ, অরেঞ্জ, ইয়েলো, গোল্ডেন, ব্রাউন, লাইট পিংক, পার্পল, প্যারট গ্রিন কালারের মতো উজ্জ্বল আইশ্যাডো। এরপর চোখে মোটা করে কাজল লাগান এবং চোখের পাপড়িতে মাশকারা দিন এক কোট। যেহেতু চোখে উজ্জ্বল রং ব্যবহার করছেন তাই লিপস্টিক হিসেবে ব্যবহার করুন লাইট কালার। লাইট কালার ব্যবহার করতে না চাইলে রেড লিপস্টিক আপনার জন্য ভালো অপশন। এছাড়া পোশাক যদি হয় শাড়ি আর রঙে লাল, তবে দিনের সাজে হালকা বেইজে গাঢ় কাজলের টানে ন্যুড টোন লিপস্টিক ভালো লাগবে।
শাড়ি পরুন বা সালোয়ার-কামিজ- ফাল্গুনের সাজে চুলে ফুল গুঁজে দিলেই সবচেয়ে বেশি ভালো দেখাবে। শাড়ির সঙ্গে খোঁপা বা বেণী বেশি মানায়। বেণী করলে ফ্রন্ট সেটিং করে টুইস্ট বেণী, এলো বেণী, ফ্রেঞ্চ বেণীসহ নানা ঢঙে বেণী করতে পারেন। এরপর বেলি, রঙ্গন, গাজরা ফুলের মালা জড়িয়ে নিতে পারেন পুরো বেণীতে। আবার জিনিয়া, তারাফুলসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট ফুল বসিয়ে দিলেও ভালো লাগবে। জারবার, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি, অর্কিড ফুলও বেণীর মাঝে মাঝে গুঁজে দেয়া যায়।
খোঁপা করলে খোঁপার একপাশে দিতে পারেন বড় একটি ফুল। কিংবা ছোট ছোট ফুল একটা একটা করে খোঁপার চারপাশে গুঁজে দিতে পারেন। যদি চুল খোলা রাখতে পছন্দ করেন তবে চুলের একপাশে আটকে দিন জারবেরা, গোলাপ, জবা, অলকানন্দা। শুধু দামি ফুল নয়, বসন্তবরণে ঘুরতে বেরিয়ে চলতিপথে কোনো বুনোফুল কুড়িয়ে চুলে গুঁজে দিলেও হয়ে উঠবেন বসন্ত সুন্দরী।
অন্য যে কোনো সময় শাড়ির সঙ্গে ভারী গহনা পরলেও ফাল্গুনের সাজে পরা উচিত হালকা ধরনের দেশীয় গহনা। তবে এ দিন সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে ফুলের গহনা। সেক্ষেত্রে গাঁদা, গোলাপ, জারবারা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ফুল দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন গলার মালা, কানের দুল ও মাথার প্রিন্সেস ব্যান্ড। হাতে ব্রেসলেটের মতো করে জিনিয়া, বেলির মালা পেঁচিয়ে নিতে পারেন। খুব ছোট আকারের গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, কসমসের টিকলি ব্যবহার করতে পারেন। শাড়ির সঙ্গে কোমরে জারবারার বিছা পরে সাজে আনতে পারেন বৈচিত্র্য।
